ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে তরুণীকে মারধরের অভিযোগ

নারী নির্যাতনপ্রতীকী ছবি

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সহসভাপতির কাছে বিয়ের সামাজিক স্বীকৃতি চাওয়ায় মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক তরুণী। তিনি এ ঘটনায় বিচার চেয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগ করেছেন। এই তরুণী রাজধানীর একটি সরকারি কলেজের ছাত্রী। তবে অভিযোগ ওঠা ছাত্রলীগ নেতা সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এই তরুণী একই অভিযোগে থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। আর ওই ছাত্রলীগ নেতাও তরুণীর বিরুদ্ধে তিনটি জিডি করেছেন।

ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম ফুয়াদ হোসেন ওরফে শাহাদাত। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই সহসভাপতি এর আগে ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীও ছিলেন এই নেতা।

গত ২৪ মে অভিযোগকারী তরুণী ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, ফুয়াদ হোসেনের সঙ্গে ১০ বছরের সম্পর্ক। এই দীর্ঘ সময় তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিষয়ে তিনি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি মীমাংসা করার দায়িত্ব দেন। পরে তিনি শেখ ওয়ালী আসিফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি গত ৫ এপ্রিল মীমাংসা করতে বসার সময় নির্ধারণ করেন৷

কিন্তু ৩ এপ্রিল ফুয়াদ তাঁকে অনেক অনুরোধ করে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করার জন্য তাঁর বাসায় ডেকে নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন ওই তরুণী। তিনি বলেন, বাসায় যাওয়ার পর সমাধান না করে ফুয়াদ তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি লাথি মারেন এবং মারাত্মকভাবে জখম করেন। তিনি উপায় না পেয়ে ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি শেখ ওয়ালী আসিফকে তৎক্ষণাৎ বিষয়টি জানান। পরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।

অভিযোগে ওই তরুণী আরও বলেন, ‘সামাজিকভাবে স্বীকৃতি চাওয়ার পর থেকেই ফুয়াদ আমার পরিবারের সবার নামে মামলা দেওয়া এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতি করার হুমকি দেন। এমনকি আমাকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি ও আমার মানসম্মান নষ্ট করার হুমকি দিচ্ছেন। তাঁর এসব কার্যকলাপে আমি আতঙ্কিত। ২০১৬ সালে মুসলিম আইন অনুসারে আমাদের বিয়ে হয় এবং সব নথি নিজের কাছে আটকে রাখেন ফুয়াদ। পরে তিনি তা অস্বীকার করেন।’

যোগাযোগ করা হলে ওই তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা ফুয়াদ হোসেন তাঁকে বিয়ে করেও সামাজিক স্বীকৃতি দিতে চাইছেন না। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি কয়েক দফায় আমাকে মারধর করেছেন। এ ছাড়া নানা হুমকিও দিয়েছেন। এ ঘটনায় আমি ৪ এপ্রিল ও ২৬ মে দুটি জিডি করেছি।’

অস্বীকার ছাত্রলীগ নেতার

ছাত্রলীগ নেতা ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত অবশ্য প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওই তরুণী যেসব অভিযোগ করেছেন, তার পুরোটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি বলেন, ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর কখনো বিয়ে হয়নি। তাঁর সম্মানহানির উদ্দেশ্যে ওই নারী মিথ্যা অভিযোগ করছেন। ওই নারীর বিরুদ্ধে তিনি একাধিক জিডি করেছেন।

পরে ফুয়াদ এই প্রতিবেদককে হোয়াটসঅ্যাপে গত বছরের ৩ নভেম্বর ও ৪ এপ্রিল তাঁর করা দুটি জিডির কপি পাঠান। প্রথম জিডিটি হাজারীবাগ থানা ও দ্বিতীয়টি তিনি করেছিলেন পল্লবী থানায়। এরপর তিনি ৭ এপ্রিল শাহবাগ থানায় জিডি করেন বলে জানিয়েছেন।

গত বছরের ৩ নভেম্বরের জিডিতে ফুয়াদ বলেছেন, ওই তরুণীর সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁর বন্ধুত্ব তৈরি হয়। সেই সূত্রে বিভিন্ন সময় তাঁদের দেখা-সাক্ষাৎ হয় এবং তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান। সেই সুবাদে ওই তরুণী নিজের মুঠোফোনে তাঁর ছবি তোলেন। পরে ঢাকায় তাঁর বাসাভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ দিতে তাঁকে বাধ্য করেন এবং বিভিন্নভাবে টাকাপয়সা চেয়ে ফোনে হুমকি দেন। টাকা না দিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে সম্মানহানির হুমকিও দেন তিনি।

৪ এপ্রিলের জিডির কপিটি অস্পষ্ট। ৭ এপ্রিলের জিডিতে ফুয়াদ উল্লেখ করেন, ৩ এপ্রিল ওই তরুণী হোয়াটসঅ্যাপে কল করে তাঁকে কথামতো কাজ না করলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যাপের মাধ্যমে অপ্রীতিকর ছোট ছোট অডিও ক্লিপ বানিয়ে সবার কাছে পাঠানোর হুমকি দেন। এমনকি বিভিন্ন ছবি এডিট করে তাঁর পরিবারের কাছে পাঠানো এবং সামাজিকভাবে হেয় করার হুমকি দেন।

ছাত্রলীগ যা বলল

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ প্রথম আলোকে বলেন, ৩ এপ্রিল ওই তরুণী তাঁকে ফোন করে মারধরের ঘটনা জানিয়েছিলেন। তিনি তাঁকে বলেছিলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে তাঁরা বিষয়টি দেখবেন। তবে পরে ফুয়াদ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এখন ওই তরুণীর অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।