নাম দিচ্ছেন, ঠিকানা দিলেন না, কীভাবে হবে: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দাখিল করা প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। বিএফআইইউর আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, নাম দিচ্ছেন, ঠিকানা দিলেন না, কীভাবে হবে। এত ভয়ের কী আছে? প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নই।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন।

পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার দাবি করে ৫৪৭ জন গ্রাহকের পক্ষে তাঁদের ছয়জন প্রতিনিধি গত মার্চে হাইকোর্টে রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান করে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় বিএফআইইউ, দুদক ও আইজিপির প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

আইজিপির প্রতিবেদন সুস্পষ্ট নয় এবং দুদকের প্রতিবেদন সন্তোষজনক নয় বলে উল্লেখ করেছেন আদালত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা, ব্যাংক লেনদেন ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিষয় উল্লেখ করে বিএফআইইউ, দুদকসহ তিন বিবাদীকে নতুন করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ুম।

বিএফআইইউর পক্ষে আইনজীবী শামীম খালেদ আহমেদ ও দুদকের পক্ষে আইনজীবী এ কে এম ফজলুল হক শুনানিতে ছিলেন। আইজিপির প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন।

ই-অরেঞ্জের কর্ণধার সোনিয়া মেহজাবিন, তাঁর স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানাসহ (বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক) অন্যদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় করা মামলার প্রসঙ্গ টেনে শুনানিতে এ কে এম আমিন উদ্দিন বলেন, ই-অরেঞ্জ শপ নামে গ্রাহকের পণ্য কেনার অর্ডার বাবদ অগ্রিম নেওয়া অর্থ ব্যক্তি হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও স্বত্বা পরস্পর যোগসাজশে মোট ২৩২ কোটি ৪৩ লাখ ৩ হাজার ৭৬৮ টাকা মানি লন্ডারিং করেন। আদালত বলেন, টাকা কোথায় গেল? বিদেশে পাচার হয়েছে? তখন এ কে এম আমিন উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন সময়ে টাকা তোলা হয়েছে। দেশের বাইরে নিতেও পারে।

শুনানির এই পর্যায়ে বিএফআইইউ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চেন্ট ছাড়া ই-অরেঞ্জ শপের হিসাব থেকে আমদাদুল হক মিলন, মুনতাছির মামুন, মহসিন রেজা চৌধুরী, ফজলুর হক, মো. জুবায়ের শিকদার, মো. কামরান হাসান, মো. রনি, ফায়সা চৌধুরী অদিতি, মো. মামুন ও আনোয়ার হোসেন মামুন কর্তৃক নগদে ২৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, যার প্রকৃত সুবিধাভোগী কে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ সময় বিএফআইইউর আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘যাঁরা টাকা তুলেছেন, তাঁরা সুবিধাভোগী না হলে প্রকৃত সুবিধাভোগী কে? তাহলে টাকা গেল কোথায়? নাম দিচ্ছেন, ঠিকানা-পরিচয় নেই। ব্যাখ্যা দিচ্ছেন নিশ্চিত হওয়া যায়নি—যা সাংঘর্ষিক এবং লুকানোর প্রবণতা।’

বিএফআইইউর আইনজীবী শামীম খালেদ আহমেদ বলেন, তাঁদের কাছ থেকে টাকা অন্য জায়গায় যেতে পারে, যা নিশ্চিত করা যায়নি। আদালত বলেন, প্রতিবেদনটি অসম্পূর্ণ, আদৌ প্রতিবেদন নয়।

শুনানির পর হাইকোর্ট শেখ সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ই-অরেঞ্জের লেনদেনের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে কি না, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য ৪ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন আদালত।