তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী ভারত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে
ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স থেকে নেওয়া

তিস্তায় একটি বৃহদায়তন প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন নিয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন ৫২ নদীর অন্যতম তিস্তায় চীনের অর্থায়ন নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে নয়াদিল্লির। এবার ঢাকা সফরে এসে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা তিস্তা প্রকল্পে তাঁর দেশের অর্থায়নের আগ্রহের কথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই তথ্য জানান। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। দুই দিনের সফরে বিনয় কোয়াত্রা গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় এসেছেন।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তায় আমরা একটা বৃহৎ প্রকল্প নিয়েছি। ভারত সেখানে অর্থায়ন করতে চায়। আমি বলেছি, তিস্তায় যে প্রকল্পটি হবে, সেটা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হবে। আমাদের প্রয়োজন যেন পূরণ হয়।’

তিস্তায় চীনও অর্থায়ন করতে চাচ্ছে, এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত যে এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে চাইছে, সে বিষয় নিয়েই আজকে আলোচনা হয়েছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক। যে সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই দেশের সংযুক্তি নিয়ে বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা সহজ করার বিষয়ে বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশের ১৬-১৭ লাখ মানুষের জন্য ভিসা ইস্যু করে ভারত। বিশ্বে সর্বোচ্চ ভিসা ভারত ইস্যু করে বাংলাদেশে। অনেক সময় ভিসা পেতে অপেক্ষা করতে হয়। সেটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, এখানকার (বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসাকেন্দ্র) সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তাঁরা আরও লোকবল নিয়োগ করছেন। কোনো উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় কাজটি করা যায় কি না, তা তাঁরা দেখছেন। তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) অনলাইনের কথা বলেছেন। অনলাইনে আবেদন করার কথা বলেছেন, যেন সহজে মানুষ ভিসা পায়। তারা (ভারত) এ বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক।

ভারত হয়ে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ফিজিক্যাল কানেকটিভিটি নিয়ে আলোচনা করেছি। সেটা অনেক দূর এগিয়েছে। বিশেষ করে, নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দেওয়া এবং এ দুই দেশ থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা। ইতিমধ্যে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করার ক্ষেত্রে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে। ট্যারিফ নিয়েও আলোচনা অনেকটা চূড়ান্ত হয়েছে। সেটি আমাদের ক্রয় কমিটিতে যাবে। সেটি হলে ভারতের ওপর দিয়ে আমরা নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারব।’

সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করার ওপর আমরা গুরুত্বারোপ করেছি। তিনি (কোয়াত্রা) জানিয়েছেন, তাঁদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এবং তাঁরা সেটি অনুসরণও করেন। তাঁদের আন্তরিকতার অভাব নেই। এটি নিয়ে দুই দেশের সরকারি ও রাজনৈতিক পর্যায়ে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছাকাছি সময়ে ভারত ও চীন সফরের কথা রয়েছে। আর ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের মূল অগ্রাধিকার প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পিত নয়াদিল্লি সফর। দুই দেশের মধ্যে কোন সফরটি আগে হবে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে খোলাসা করে বলেননি। তবে তিনি বলেন, দিল্লি তো কাছে, বেইজিং একটু দূরে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনেক আগে থেকে ভারত সফরের কথা রয়েছে। ভারতে যেহেতু নির্বাচন, সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কখন সফর হবে, সেটি নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভারতে নির্বাচনের পর সরকার গঠন হবে। তারপর প্রধানমন্ত্রীর সফর কখন হবে, সেটা ঠিক হবে।