বললেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
নারীর মর্যাদা যে রক্ষা হচ্ছে না, তার প্রমাণ জুলাই আন্দোলনের পর মেয়েদের হারিয়ে যাওয়া
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘নারীর মর্যাদা যে রক্ষা হচ্ছে না, তার প্রমাণ জুলাইয়ের আন্দোলনের পর মেয়েদের হারিয়ে যাওয়া।’ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীদের পেছনে ঠেলে দেয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জুলাই কন্যা অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ১০০ জন নারী এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘পারিবারিকভাবে আমরা (নারীরা) সব জায়গায় যেন সমান মর্যাদা পাই, সে জন্যই অনেক কথা আমাদের বলতে হয়, অনেক কাজ করতে হয়। অনেক দিন ধরে আমরা এটা করছি এবং কোনো অবস্থাতেই কোনোভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে, ধর্মীয় কোনো বিষয় আমরা যেন ক্ষুণ্ন না করি, মর্যাদা ক্ষুণ্ন না করি, সে বিষয়ে আমরা (অন্তর্বর্তী সরকার) সতর্ক আছি।’
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে যৌনকর্মীদের শ্রমিকের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ‘একটু ভুল–বোঝাবুঝি আছে’ বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যে আসলে তাঁদের (যৌনকর্মী) মর্যাদা মানুষের মর্যাদা, সেটা যেকোনো পেশায়। পুরুষেরাও অনেক পেশায় এমন থাকেন, যেটা হয়তো গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু মানবিক মর্যাদা সবারই থাকা উচিত।’
‘পবিত্র কোরআনের বিরুদ্ধে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন কোনো কিছু বলেনি’ উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, ‘মেয়েরা যে ভাইদের অর্ধেক পায় বা যেই অসম একটা বণ্টনের ব্যবস্থা আছে, সেটা আসলে বহু মুসলিম দেশে কিন্তু এটার পরিবর্তন হয়েছে। নারী কমিশনের (নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন) প্রতিবেদনে আমি দেখেছি এবং সেটাতে এটা বলা হয়েছে যে ধর্মীয় আইন যারা মেনে উত্তরাধিকারের সম্পদ বণ্টন করতে চায়, সেটা অবশ্যই থাকবে। সেটা বদল করার কথা বলা হয়নি। কিন্তু যারা সিভিল ল–তে (দেওয়ানি আইনে) করতে চায়, ভাই–বোনকে সমান দিতে চায়, সন্তানকে সমান দিতে চায়, সে কথা বলা হয়েছে।’
নারীর অধিকার ও মার্যাদার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়। অধিকার কেউ কারও বাসায় এসে দিয়ে যায় না। আমরা সেই চেষ্টাই করব।’ তিনি দেশের সব পর্যায়ের আয়োজনে নারীদের আরও বেশি অংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি জানান।
জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশনের সভাপতি জান্নাতুন নাঈম প্রমীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ আনাসের মা সানজিদা খান। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহত ব্যক্তিরা বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তাঁরা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের আরও বেশি অংশগ্রহণ নিশ্চিতের দাবি জানান।