গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পিরোজপুর শহরের দামোদর সেতুর ওপর কথা হয় রেহেনার সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন বিকেলে সেতুর এক প্রান্তে ফুটপাতে বসে শাক বিক্রি করেন। গতকাল বিকেলে নিয়ে এসেছিলেন ১৬ মুঠি হেলেঞ্চাশাক। প্রতি মুঠি ১০-১৫ টাকা বিক্রি করেন। হেলেঞ্চা ছাড়া মাঝেমধ্যে কলমিশাক ও কচুর লতিও বিক্রি করেন। সড়কের ধারে, মানুষের বাড়ির আশপাশে ও পতিত জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শাক তুলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

রেহেনা বেগম বলেন, স্বামী লিটন শেখ তাঁকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করে মাদারীপুরে সংসার পেতেছেন। ২০ বছর আগে ছেড়ে যাওয়ার পর আর কোনো দিন খোঁজখবর নেননি। মেয়েকে এসএসসি পাস করিয়েছেন। বিয়ে দিয়েছেন। এখন একার সংসার হলেও তিন বেলা খাওয়া ও পিরোজপুর শহরে ঘরভাড়ার খরচ জোগাতে শাক বিক্রি করেন। সকাল ছয়টায় শাক কুড়ানো শুরু করেন। তা প্রস্তুত করে বিক্রি শেষ করতে রাত নয়টা বেজে যায়। শাক বিক্রি করে ২০০–২৫০ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলেন। বর্তমানে কুড়ানো শাকের উৎস কমে যাওয়ায় চিন্তায় আছেন।

শাকের স্বল্পতা ও অনেকে তাঁদের জমির শাক তুলতে নিষেধ করায় ১৫–২০ মুঠি শাক জোগাড় করতে অনেক কষ্ট হয়ে যায় বলে জানালেন রেহেনা। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এত অল্প আয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। মাংস খাওয়া হয় না অনেক দিন। ডিম, ডাল ও সবজি বেশি খাওয়া পড়ে।

রেহেনা বেগম বলেন, স্বামী ছাড়া একজন নারীর পক্ষে সন্তান মানুষ করা ও সংসার চালানো খুবই কষ্টের। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়ায় এবং স্বামী চলে যাওয়ায় তাঁকে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ সংগ্রাম হয়তো শেষ হবে।
রেহেনাকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা গ্রামের পানচাষি চিত্তরঞ্জন শিকদার। তিনি বলেন, হার না মানা সংগ্রামী নারী রেহেনা। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে টিকে থাকার শক্তি ও মনোবল তাঁর আছে।