আক্রমণের কথা খোলাখুলি বলেছিল, সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে না: উদীচী

উদীচী ও ছায়ানটের কার্যালয় এবং গণমাধ্যমের ওপর হামলার প্রতিবাদে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মশালমিছিল। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেছবি: দীপু মালাকার

যারা উদীচীর কার্যালয়ে হামলার হুমকি দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠনটি।

কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার উদীচীর প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এই সমালোচনা করেন সংগঠনটির একাংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম। এই সমাবেশ থেকে ছায়ানটে হামলা, অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদও জানানো হয়। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে (জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে) এই সমাবেশ হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসী আক্রমণের পর ধানমন্ডিতে ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে ভাঙচুর চালানো হয়। পরদিন রাতে তোপখানা সড়কে উদীচীর কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

মাহমুদ সেলিম বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, উদীচী, ছায়ানট এবং পত্রপত্রিকার ওপরে আক্রমণ করে, আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য কোনো কোনো ছাত্রনেতা, যুবনেতা এবং যুবনেত্রী খোলাখুলি বলেছে।’ সরকার এখনো ওই সব নেতা-নেত্রীকে আইনের আওতায় এনেছে কি না, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সরকার হামলা ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে তাকিয়ে দেখছিল বলে অভিযোগ করেন মাহমুদ সেলিম। এমন তাকিয়ে থাকার দিন বেশি দিন থাকবে না বলে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘মানুষ কিন্তু একত্র হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আবারও পথে নামবে।’

প্রবীণ সংস্কৃতিকর্মী মাহমুদ সেলিম ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে উদীচীর কর্মীদের বোমা হামলা থেকে শুরু করে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আসার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘অতীতে যারা হামলা করেছিল, বর্তমান হামলাগুলোও তার ধারাবাহিকতা।’

উদীচী ও ছায়ানটের কার্যালয় এবং গণমাধ্যমের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুললেও তা পূরণ না হওয়ার কথা তুলে ধরে মাহমুদ সেলিম বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের পরই মাজার ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের ওপর হামলা হয়েছে। মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস হচ্ছে। তারা সেই লোক, যাদের মত নিয়ে প্রশ্ন তুললেই তারা রেগে গিয়ে আক্রমণ করে।’

বিক্ষোভ সমাবেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন উদীচীর কর্মী মিসবাহ ফারাজী।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে সাবেক ছাত্রনেতা, বর্তমানে দৈনিক সমকালের সহকারী সম্পাদক সাইফুর রহমান তপন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কে শত্রু কে মিত্র, সেটা বোঝা যায় না। এমন ঘোলাটে পরিস্থিতি অনেক বিপজ্জনক। তিনি এই পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নতুনভাবে জানা ও বোঝার তাগিদ দেন। পাশাপাশি তিনি সব সংস্কৃতিকর্মীকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন শুভ বলেন, একটি মৃত্যুকে পুঁজি করে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, উদীচী ও ছায়ানটে হামলা করেছে। একই রকম ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস ও লক্ষ্মীপুরে শিশু আয়েশাকেও হত্যা করে এই উগ্রবাদী গোষ্ঠী। বর্তমান পরিস্থিতিতে যারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, এই শক্তিটি তাদেরকে আওয়ামী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

উদীচী ও ছায়ানটের কার্যালয় এবং গণমাধ্যমের ওপর হামলার প্রতিবাদে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মশালমিছিল। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেকান্দার হায়ৎ আওয়ামী লীগের মতো জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকেও নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

উদীচীর সহসাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন, শিবানী ভট্টাচার্য, সংগঠন বিভাগের সম্পাদক আনিছুর রহমান, জাতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলনের সদস্যসচিব রুস্তম আলী খোকন প্রমুখ।

প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে উদীচী একটি মশালমিছিল বের করে।

আরও পড়ুন