অনেক কষ্টে বড় করা ছেলে ভর্তি হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে, দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন শেষ মায়ের

ছেলের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আবদুল্লাহর মা, তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন এক স্বজন। আজ রোববার টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আসরা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারান মো. আবদুল্লাহ। মানুষের বাসায় কাজ করে তাঁর মা সংসার চালাতেন। তাঁদের থাকার জায়গা ছিল না। গ্রামে বিভিন্ন মানুষের বাড়ির বারান্দায়ও মাঝেমধ্যে তাঁদের রাত কেটেছে। তাঁকে ঘিরে সব স্বপ্ন ছিল মায়ের। মায়ের স্বপ্নকে ধারণ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। সমাজকর্ম বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেন।

আবদুল্লাহর স্বপ্ন ছিল বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যুক্ত হবেন। সেই প্রস্তুতিও চলছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের পড়াশোনা ও মায়ের সংসারের খরচ চালাতেন। তাঁর দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামীরা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।

মা–বোনদের সঙ্গে ঈদ করতে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমারা ইউনিয়নের আসরা গ্রামে যান আবদুল্লাহ। ঈদের আগের দিন ভগ্নিপতির মোটরসাইকেল নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে যান উপজেলা সদরে। বাড়ি ফেরার পথে আরেকটি মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। সেখান থেকে দ্রুত উপজেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে এবং পরে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার রাতে তিনি মারা যান।

টিউশনি করে নিজে চলতেন ও পরিবার চালাতেন আবদুল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত

ফুফাতো ভাই মো. সেলিম মুঠোফোনে আবদুল্লাহ ও তাঁর মায়ের জীবনসংগ্রাম নিয়ে প্রথম আলোকে যখন বলছিলেন, তখন পাশেই মায়ের কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

সেলিম বলেন, ‘আমরা দরিদ্র পরিবার। আবদুল্লাহকে হারিয়ে তাঁর মায়ের স্বপ্ন শেষ। তাঁর স্বপ্ন ছিল, ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট হবে। কিন্তু তাঁকে মেরে ফেলা হলো। এখন কারও সাহায্য ছাড়া আবদুল্লাহর মায়ের সংসার চালানো কঠিন হবে। কারণ, থাকার জায়গা ছাড়া তো জমিজমা কিছু নেই।’

সেলিম বলেন, এটি কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, এটি হত্যাকাণ্ড। বেপরোয়া যে মোটরসাইকেলটি আবদুল্লাহর মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়েছিল, তার চালকের যেন আইন অনুযায়ী বিচার হয়। অর্থ বা প্রভাব খাটিয়ে কেউ যেন বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে।

সহপাঠীরা বলেন, দুর্ঘটনার পর আবদুল্লাহর পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব ছিল না। তাই বন্ধুরা মিলে সাহায্য তুলে উন্নত চিকিৎসা করার ব্যবস্থা নেন তাঁরা। পড়াশোনা-টিউশনি করেই নিজে ও পরিবার চালাতেন। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া।

সহপাঠী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আবদুল্লাহ তাঁর পরিবারকে যখন আনন্দ দেওয়ার সময় এল, ঠিক সে সময় সড়কের বিশৃঙ্খলায় আমাদের বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর পরিবার এখন অন্ধকারে। তাঁদের একটি টিনের ঘর ছাড়া আর কিছু নেই। পরিবারের পক্ষ থেকে বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।’

ঘটনা সম্পর্কে জানতে স্থানীয় মহিষমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহির উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাোয়া যায়নি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, এভাবে একজন চলে যাওয়া একটি পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা দেবে। এ ছাড়া তাঁরা অন্য কোনো প্রয়োজনে আবেদন জানালে বিশ্ববিদ্যালয় তা–ও গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে।