কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার এখন একটি বৈশ্বিক উদ্বেগে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘এআইয়ের অপব্যবহার এখন বৈশ্বিক মাথাব্যথা। যেকোনো যন্ত্রের মতো এটি ভালো কাজের জন্য যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনি খারাপ কাজের জন্যও করা যায়।’
এ জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে অপতথ্য রোধে ২৪ ঘণ্টার কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সিইসি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সেমিনারে সিইসি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনের আইডিয়া প্রজেক্ট ও সিবিটিইপি প্রজেক্ট ‘ইন্টিগ্রেশন অব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন আপকামিং ন্যাশনাল পার্লামেন্ট; ইলেকশন টু কাউন্টার মিসইনফরমেশন অ্যান্ড ডিজইনফরমেশন’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য মোকাবিলায় নির্দিষ্ট ও বাস্তবভিত্তিক সুপারিশ দিতে বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানান সিইসি। এ সময় সিইসির সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সিইসি বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন এআই প্রযুক্তি একীভূত করার উদ্যোগ নিচ্ছে। ব্যবস্থাটি এমন হতে হবে, যা গভীর রাতেও উদ্ভূত মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য শনাক্ত ও মোকাবিলায় সক্ষম হবে। এটি হবে ২৪ ঘণ্টার কাজ।’
এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে ঠিক করতে হবে, কী ধরনের পেশাজীবী এতে যুক্ত করা হবে, কত দ্রুত তথ্য যাচাই করা যাবে এবং কোন সংস্থা এতে সহায়তা করবে।’
তথ্য যাচাই সেলের কাঠামো, জনবল, প্রতিটি শিফটে প্রয়োজনীয় কর্মীর সংখ্যা এবং সমন্বয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দিষ্ট প্রস্তাব প্রয়োজন বলেও মনে করেন সিইসি। এ সময় পাহাড়ি অঞ্চল বা দুর্গম দ্বীপাঞ্চলের মতো প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উদ্ভূত ভুল তথ্য মোকাবিলার চ্যালেঞ্জের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রত্যন্ত এলাকার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সেলের সংযোগ গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আমি শুধু নীতিগত দিকনির্দেশনা চাই না। আমাদের দরকার বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা—কারা কাজ করবে, কতজন লাগবে, কীভাবে আমরা দূরবর্তী এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করব, এসব।’
সিইসি আশা প্রকাশ করেন, এ সেমিনারের মাধ্যমে নির্বাচনী ভুল তথ্য মোকাবিলায় কার্যকর সুপারিশ পাওয়া যাবে। আর সেসব আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আরও সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে সহায়তা করবে।
সেমিনারে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করি। নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে কাজ করি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার যতই প্রাসঙ্গিকতা থাকুক না কেন, এআইয়ের যে ভয়াবহতা, তার প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, বিশ্বে ৯২ শতাংশ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।’
একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপপ্রযুক্তি রোধে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন ইসি সচিব। এ আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, তথ্যপ্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।