খাগড়াছড়িতে জেলা পরিষদ ভবনের ছাদ ধসে নিহত ২

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে পড়ার পর উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। শনিবার বিকেলে
ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নতুন ভবনের বারান্দার ছাদ ধসে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ছাদের ঢালাইকাজ করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঢালাইকাজ চলাকালে ছাদ ধসে দুজন নিহত ও আটজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত শ্রমিকদের মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন নামের একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি জেলা সদরের কলেজগেট এলাকার মো. আমিনের ছেলে। অন্যজনের এখনো পরিচয় মেলেনি। এখনো উদ্ধারকাজ চলছে।

এ ঘটনায় আরও আট শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত পাঁচজনকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মো. রোকন (৩৮), মো. হাসান (২৪), মো. হানিফ (২৫), মো. হানিফ (২৭) ও মো. সোহেল (২৩)। অন্য তিনজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া অন্য শ্রমিকদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা কাজ করছেন।

ঢালাইকাজ করা শ্রমিকদের প্রধান আবদুল জলিল জানান, জেলা পরিষদের বর্ধিত নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দার ঢালাইয়ের কাজ করছিলেন ২২ শ্রমিক। আকস্মিকভাবে সেটি ধসে পড়লে শ্রমিকেরা দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। ধসে পড়া ছাদের নিচে চাপা পড়ে আট শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন।

এদিকে রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো কোনো শ্রমিক আটকে আছেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরীসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পরিদর্শনে এসে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। এ ক্ষেত্রে কারও কোনো অবহেলা থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে জানান তিনি।

ধসে পড়া ছাদের সাটারিং ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন উদ্ধার-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, ছাদটি নির্মাণের জন্য যে সাটারিং করা হয়েছিল, সেটি দুর্বল ছিল। ঢালাইকাজের সময় বাঁশের তৈরি সাটারিং ভার নিতে পারেনি।

খাগড়াছড়ি সেনা সদর জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস মিলে আমরা নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধারে কাজ করছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ছাদের সাটারিং ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।’

সাটারিং ত্রুটির বিষয়ে জানতে জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমা ও সহকারী প্রকৌশলী প্রশান্ত কুমার হাওলাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।