ডুবে মৃত্যু রোধ না হলে এসডিজি পূরণ হবে না 

দেশে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ পানিতে ডুবে মৃত্যু। 

পানিতে ডুবে মৃত্যু
প্রতীকী ছবি

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় ১৭ জুলাই পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়। রাস্তার পাশে খেলার একপর্যায়ে ডোবার পানিতে ডুবে ওই তিন শিশু মারা যায়। তাদের বয়স পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে। দেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

সরকারি হিসাবেই দেখা গেছে, দেশে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ এখন পানিতে ডুবে মৃত্যু। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি এক হাজার জীবিত জন্মে অনূর্ধ্ব–৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমপক্ষে ২৫–এ নামিয়ে আনা।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধ না হলে এসডিজির লক্ষ্য অর্জিত হবে না। এই প্রতিরোধযোগ্য দুর্ঘটনা রোধে খুব কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে আজ ২৫ জুলাই ‘বিশ্ব ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ পালিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বছর দিনটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘যে কেউ পানিতে ডুবে যেতে পারে: একটি মৃত্যুও কাম্য নয়।’ 

পানিতে ডুবে কত শিশুর মৃত্যু হয়

দেশে পানিতে ডুবে মৃত্যুর বিষয়ে সর্বশেষ দেশব্যাপী জরিপ হয় ২০১৬ সালে। ‘বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভে’ নামে ওই জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ফলাফল বলছে, প্রতিদিন অনূর্ধ্ব-৫ বছর বয়সী ৩০ শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ৮০ ভাগ ঘটনা ঘটে বাড়ির ২০ গজের মধ্যে।

গবেষণায় দেখেছি, প্রতিবছর ৫ বছর বয়সী অন্তত ১১ হাজার শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। এই মৃত্যুর বড় অংশের খবর পত্রিকায় আসে না।
এ কে এম ফজলুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক, সিআইপিআরবি

পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে কাজ করা সংগঠন সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চের (সিআইপিআরবি) নির্বাহী পরিচালক এ কে এম ফজলুর রহমান মনে করেন, বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি। সিআইপিআরবি ২০০৫ সাল থেকে শিশুমৃত্যু রোধে কাজ করে আসছে। 

এ কে এম ফজলুর রহমান বলেন, ‘গবেষণায় দেখেছি, প্রতিবছর ৫ বছর বয়সী অন্তত ১১ হাজার শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। এই মৃত্যুর বড় অংশের খবর পত্রিকায় আসে না।’ 

এসডিজির লক্ষ্য, বাংলাদেশের অবস্থা

গত এপ্রিলে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসে (২০২১)’ দেখা গেছে, এক হাজার জীবিত জন্মে দেশে অনূর্ধ্ব–৫ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ২৮। ২০২০ সালের জরিপেও এ হার এমনটাই দেখা গিয়েছিল। অর্থাৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এদিকে এসডিজির লক্ষ্য আছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এ হার ২৫–এর নিচে নামিয়ে আনা। যদিও দেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার বাড়ছে।

স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (২০২১) অনুযায়ী, পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হয় পানিতে ডুবে। গত তিন বছরে এর হার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শিশুদের ডুবে মৃত্যুরোধে ১০টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। এর মধ্যে রয়েছে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন, সাঁতার শেখানো, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রভৃতি। এই ব্যবস্থার পাশাপাশি ডুবে মৃত্যু রোধে একটি জাতীয় কর্মপন্থাও করতে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

দেশে ডুবে মৃত্যু রোধে একটি জাতীয় কর্মপন্থা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তবে গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ঢাকায় এক সেমিনারে  বলেছেন, ‘জাতীয় কর্মপন্থাটি তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছি আমরা, যা বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।’