ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা

ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে। গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোডসংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এম ই এস বিল্ডিং নম্বর-৫৪’কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ আদেশ জারি করা হলো। আদেশটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই তিন মামলায় ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিল প্রসিকিউশন।

আরও পড়ুন

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সেনা সদরে ‘এম ই এস বিল্ডিং নম্বর-৫৪’কে সাময়িক কারাগার ঘোষণার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে।

গত শনিবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৫ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) আছেন।

রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা তিন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর যে ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী নিজেদের হেফাজতে রাখতে চায়। এ বিষয়ে সেনা কর্তৃপক্ষের একটা ভাবনা হলো, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামি হওয়া এসব কর্মকর্তা সেনা হেফাজতে থাকবেন। মামলার নির্দিষ্ট তারিখে সেনাবাহিনী তাঁদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করবে, আদালতের কার্যক্রম শেষে আবার হেফাজতে নিয়ে যাবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন
ছবি: স্ক্রিনশট
আরও পড়ুন

এমন আলোচনার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করল। তবে এই কারাগারে শুধু বর্তমান কর্মকর্তাদের নাকি সাবেকদেরও রাখা হবে, তা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়নি।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার যদি কোনো বাড়িকে সাবজেল বা উপকারাগার ঘোষণা করে, সেখানে মামলার আসামি রাখতে পারেন। এমন নজির রয়েছে।

কোনো নির্দিষ্ট জায়গাকে সাবজেল (উপকারাগার) ঘোষণা করার ক্ষমতা সরকারের আছে বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। গতকাল সোমবার বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, কোন জায়গাকে কারাগার ঘোষণা করা হচ্ছে, তা তাঁদের বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে আসামিকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে। এরপর আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে আসামিদের কোন কারাগারে রাখা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

আরও পড়ুন

মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আরও বলেন, আইন হচ্ছে আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনতে হবে। আদালতে আনার পরে আদালত যদি ফারদার অর্ডার (পরবর্তী আদেশ) দিয়ে বলেন কারাগারে পাঠান, তখন কারাগার বলতে সেটা কেন্দ্রীয় কারাগারও হতে পারে, সেটা জাতীয় সংসদ ভবনের মধ্যেও হতে পারে, এমপি হোস্টেল হতে পারে বা অন্য কোনো জায়গাকেও যদি সরকার কারাগার ঘোষণা করে, সে জায়গায় পাঠানো যেতে পারে। সেটা জেল বা কারাগার হিসেবে গণ্য হবে।

এর আগে ২০০৭ সালে এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পর বিশেষ কারাগারে রাখা হয়েছিল। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই থেকে সংসদ ভবন এলাকায় হুইপদের জন্য বরাদ্দ একটি বাড়িতে শেখ হাসিনাকে রাখা হয়। ওই বাড়ির উল্টো দিকে স্পিকারের জন্য তৈরি করা বাড়িতে একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়।

আরও পড়ুন