পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর সীমান্তে ৪০টির মতো মর্টার শেল বিস্ফোরণ

৫ দিন বন্ধ থাকার পর মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠছে আবারও । কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নেফাইল ছবি।

পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের দক্ষিণে চারমাইল এবং উত্তরের নাকফুরা এলাকা থেকে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। গতকাল শনিবার দিনভর থেমে থেমে ৪০টির বেশি মর্টারশেলের বিস্ফোরিত হয় বলে সীমান্ত এলাকার লোকজন বলছেন। বিস্ফোরণের শব্দ নাফ নদীর এপারে টেকনাফের সাবরাং, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম থেকে শোনা গেছে। তবে শনিবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে আজ রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত সেখানে মর্টার শেল কিংবা গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণ ঘটেনি।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘ দুই মাস ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘাত চলছে। সীমান্তসংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় আরাকান আর্মি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে। ব্যবসার কাজে এদেশে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলের একটি এলাকা ও বেশ কিছু থানা দখল করে নিয়েছে। ওই এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ পুনপ্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া সে দেশের সেনাবাহিনী। এ জন্য সংঘাত বাড়ছে।

সংঘাতের কারণে সরকারি বাহিনীর বেশ কিছু সদস্য কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩ জন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এর আগে ১১ মার্চ আশ্রয় নেন আরও ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য। তাঁরা সবাই নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে ১১ বিজিবি ( বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) হেফাজতে রয়েছেন। এর আগে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।

হ্লীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুই পক্ষে মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। তা থেমে থেমে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটা পর্যন্ত চলছিল। বিকট বিস্ফোরণের শব্দ নাফ নদীর এপারে হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উত্তরপাড়া, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, হ্নীলা, মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, পুরান বাজারসহ কয়েকটি গ্রামে শোনা গেছে। ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটান অনেকে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ওপারের দুই মাসের সংঘাতে টেকনাফ সীমান্তের লোকজন আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর নতুন করে মর্টার শেলের বিস্ফোরণে টেকনাফের কয়েকটি গ্রাম কেঁপে ওঠে।

রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার থেকে আবারও গোলাগুলি সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।