বেঙ্গল শিল্পালয়ে শুরু হয়েছে ‘ডেথ সেনটেন্স’ শিল্প প্রদর্শনী

ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে শুরু হয়েছে ‘ডেথ সেনটেন্স’ শীর্ষক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। বৃহস্পতিবার উদ্বোধনের পর অতিথিরা প্রদর্শনী ঘুরে দেখেনছবি: প্রথম আলো

ছোট ছোট ফুল দিয়ে মোড়ানো রাইফেল। বাহারি নকশা করা তরবারি, ছুরি। গ্রেনেডের গায়েও ফুলেল নকশা। কনক্রিট খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন আকারের যুদ্ধাস্ত্র। বাদ্যযন্ত্র বানাতে ব্যবহার করা হয়েছে কার্তুজ। এই কার্তুজই সৃষ্টি করছে অদ্ভুত সুরের মুর্ছনা।

এমন ৮০টির বেশি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে ‘ডেথ সেনটেন্স’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে। রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে আজ বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বেঙ্গল আর্টস প্রোগ্রাম।

ফাল্গুনের দ্বিতীয় দিনের বিকেলে আয়োজন করা হয় প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। শুরুতেই বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী চিত্রকর্ম আয়োজনের পেছনের গল্প তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পরিচালক সুবীর চৌধুরীর স্মরণে ২০১৫ সালে ‘সুবীর চৌধুরী গ্রান্ট’ চালু করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। তার আওতায় এই প্রদর্শনী আয়োজন করতে পেরে তাঁরা আনন্দিত।

শিল্পী আনিসুজ্জামান সোহেল, ইমরান সোহেল, প্রমথেশ দাস পুলক, নাজমুন নাহার কেয়া এবং শিমুল দত্তের শিল্পকর্ম নিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। অ্যাক্রেলিক, নিউ মিডিয়া, ভাস্কর্য, ভিডিও আর্ট, স্কাল্পচার, জলরং, ড্রয়িং, মৃৎশিল্পসহ বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ঢাকার পরিচালক এম ফ্রাঁসোয়া গ্রোসজিন। তিনি বলেন, এই প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলো খুবই মনোমুগ্ধকর। বাংলাদেশে শিল্পী হওয়া সহজসাধ্য নয়। শিল্পীরা সমাজের নানা দিক, অসংগতি তুলে ধরেন তাঁদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে।

অনুষ্ঠানে শিল্পী ও শিল্প লেখক মুস্তাফা জামান বলেন, মানব সমাজের ভেতরের একরূপ আর বাইরের পোশাকি সংস্কৃতির বিষয়ে মুখের ওপর প্রশ্ন ছুড়ে দিতে শিল্পকর্মে সহিংসতার বিষয়টি চিত্রকর্মে আনা হয়। এই প্রদর্শনীতে ইতিহাসকে ভিন্ন চোখে দেখা হয়েছে। যে বিষয়ে ইতিহাসবিদ, গবেষকেরা কথা বলছেন না, শিল্পীরা তার শিল্পকর্মে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন।

অনুষ্ঠানে প্রদর্শনীর কিউরেটর জুয়েল এ রব বলেন, প্রস্তরযুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং প্রসারকে কাজে লাগিয়ে বিবর্তিত হয়েছে মারণাস্ত্র ও হাতিয়ার। এসব মারণযন্ত্রের নিপুণ অবয়ব সৃষ্টির পেছনে দৃশ্যকলা শিল্পের ভূমিকা কম ছিল না। দৃশ্য শিল্পকলার দায় কি মানুষের মনকে আলোড়িত ও বিমুগ্ধ করা নাকি ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে হানাহানি ও হত্যার দোসর হওয়া? এ নিয়ে সমসাময়িক পাঁচজন শিল্পী কী ভাবছেন, তা এই প্রদর্শনীতে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

উদ্বোধনের পর অতিথিরা প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। ‘ডেথ সেনটেন্স’ প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার (রোববার ছাড়া) বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে।