মোখার আগের রাতে জন্মানো শিশুটির মা ও বাবা আমার জন্য মিষ্টি এনেছিলেন

ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছিল ১৪ মে। আগের দিন রাতেই কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করা হয়। সন্তানসম্ভবা নারী জয়নব বেগম ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগের দিন রাতে আশ্রয় নিয়েছিলেন জেলার পেকুয়া উপজেলার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। সে রাতে তাঁর প্রসববেদনা ওঠে। ওদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না। খবর পেয়ে রাত দেড়টায় আশ্রয়কেন্দ্রটিতে উপস্থিত হন পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর হায়দার। তিনি জয়নবকে নিজের গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ভোরে একটি ফুটফুটে শিশুর জন্ম হয়, নাম রাখা হয় ‘মোখা’। ওসি ওমর হায়দারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এস এম হানিফ

মোহাম্মদ ওমর হায়দার

প্রশ্ন :

কেমন আছেন?

হায়দার: ভালো আছি।

নবজাতক ‘মোখাকে’ কোলে নিয়ে মা জয়নব বেগম। এটি তাঁর প্রথম সন্তান। পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী এয়ার আলী খান আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

প্রশ্ন :

সেই রাতে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে আপনি প্রশংসা পেয়েছেন। কেমন লাগছে?

হায়দার: খুবই ভালো লাগছে বিষয়টি। পুলিশের কাজ তো মানুষের জন্যই। কাজটি করতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত।

প্রশ্ন :

খবরটি কীভাবে পেয়েছিলেন?

হায়দার: ঘূর্ণিঝড়ের আগের রাতে আমি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করছিলাম। একটি কেন্দ্রে গিয়ে খবর পাই, রাজাখালী এয়ার আলী খান আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে একজন প্রসূতি প্রসববেদনায় কাতরাচ্ছেন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

তারপর কী করলেন?

হায়দার: আমি জানতাম, রাত দেড়টায় উপকূলীয় এলাকা রাজাখালী থেকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য গাড়ি পাওয়া দুষ্কর। আমি তখনই ওই আশ্রয়কেন্দ্রে যাই। প্রসূতিকে আমার সরকারি গাড়িতে তুলে হাসপাতালে রওনা দিই। হাসপাতালে নেওয়ার পর ভোর সাড়ে চারটায় ওই নারী একটি ফুটফুটে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন।

প্রশ্ন :

ঘটনাটি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন হবে, সেটা কি ধারণা করেছিলেন?

হায়দার: না। এটা ভাবিনি এবং সে জন্য এই কাজও আমি করিনি। পরে জানতে পারি, বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে।

প্রশ্ন :

কেউ আপনাকে কিছু বলেছে? পুলিশের কেউ?

হায়দার: প্রথম আলো অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর পুলিশ হেডকোয়ার্টারের (সদর দপ্তর) একজন ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক) স্যার আমাকে মেসেজ (মুঠোফোনে খুদে বার্তা) পাঠিয়ে প্রশংসা করেছেন। অনেক সিনিয়র অফিসার (জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা) এই কাজের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

প্রশ্ন :

আর কখনো এ রকম কোনো কাজ করতে পেরেছিলেন?

হায়দার: মানবিক নানা কাজ বিভিন্ন সময় সামনে আসে। আমরা করেও থাকি। কিন্তু এমন আলোচনা আগে হয়নি।

প্রশ্ন :

নবজাতককে পরে দেখতে গিয়েছিলেন?

হায়দার: সন্তান জন্মদানের পরদিন সকালে ওই নারী হাসপাতাল ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যান। সেখানে ওই দিন বিকেলে আমি গিয়েছিলাম নবজাতকের জন্য কিছু উপহার নিয়ে। আশ্রয়কেন্দ্রের সবাইকে মিষ্টিমুখও করিয়েছিলাম।

প্রশ্ন :

প্রসূতি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আপনাকে কিছু বলেছিলেন?

হায়দার: এক দিন পর শিশুটির মা ও বাবা আমার জন্য আমার অফিসে মিষ্টি নিয়ে এসেছিলেন। তাঁরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

প্রশ্ন :

শিশুটির নাম মোখা কীভাবে রাখা হলো?

হায়দার: আসলে আমি এটি ঠিক বলতে পারব না। আশ্রয়কেন্দ্রে যখন আমি নবজাতককে দেখতে যাই, তখন শিশুটির মা-বাবা জানিয়েছেন, তার ডাকনাম মোখা রাখা হয়েছে।

প্রশ্ন :

অতীতে কোনো কাজে এমন প্রশংসা পেয়েছেন?

হায়দার: মামলা-মোকদ্দমার রহস্য উদ্‌ঘাটন করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছি। তবে মানবিক কাজ করে মানুষের এত প্রশংসা এই প্রথম।

প্রশ্ন :

আপনার পরিবারে কে কে আছেন?

হায়দার: স্ত্রী ও দুই ছেলেসন্তান। আমার মা-বাবা বেঁচে নেই।

প্রশ্ন :

স্ত্রী কী বলেছেন?

হায়দার:তিনি খুবই আনন্দিত। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের লিংক আমাকে পাঠিয়েছেন।