সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের পিএসসহ নতুন আসামি ৩৭ জন

সত্যজিৎ মুখার্জি
ছবি: সংগৃহীত

মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) সত্যজিৎ মুখার্জিসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯–এ অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান।

আরও পড়ুন

সম্পূরক অভিযোগপত্রে, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত, তাঁর ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেল ছাড়াও নতুন করে আরও ৩৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগের অভিযোগপত্রে বরকত, রুবেলসহ ১০ জন আসামি ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামি বরকত, রুবেলসহ অন্যদের স্বীকারোক্তিতে যেসব আসামির নাম উঠে এসেছে, তাঁদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছে সিআইডি। কার হিসাবে কত টাকা লেনদেন, আয়ের উৎস, কত টাকা, কীভাবে লন্ডারিং করা হয়েছে, তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে অভিযোগপত্রে। আগামী ৫ জুলাই মামলার অভিযোগপত্র আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হবে।

সত্যজিৎ মুখার্জির বিষয়ে সিআইডির সম্পূরক অভিযোগপত্রের তথ্য বলছে, তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য আদালতকে জানিয়েছিলেন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার। তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন, তিনি একজন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। মোকাররম বাবু ও বাবর সাহেব (খন্দকার মোহতেশাম) টেন্ডারবাজি শুরু করেন, সত্যজিৎ মুখার্জি এ বিষয়ে জানতেন।

আরও পড়ুন

অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন নাজমুল ইসলাম খন্দকার, আসিবুর রহমান, খন্দকার মোহতেশাম, এ এইচ এম ফুয়াদ, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ, কামরুল হাসান ডেভিড, মোহাম্মদ আলী, তরিকুল ইসলাম, নিশান মাহমুদ, বিল্লাল হোসেন, সিদ্দিকুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, অনিমেষ রায়, সামছুল আলম চৌধুরী, দীপক মজুমদার, শেখ মাহতাব আলী, সফিকুল ইসলাম, ফকির মো.বেলায়েত, গোলাম মোহাম্মদ নাসির, জামাল আহমেদ খান, বেলায়েত মোল্লা, আহসান হোসেন খান, অমিতাভ বোস, চৌধুরী মো. হাসান, জাফর ইকবাল, বরকতের স্ত্রী আফরোজা পারভীন,  রুবেলের স্ত্রী সোহেলী ইমরুজ, সাহেব সরোয়ার, সাজ্জাদ হোসেন, স্বপন কুমার পাল, জাহিদ ব্যাপারী, খলিফা কামাল, নাফিজুল, রিয়াজ আহমদ, আনোয়ার হোসেন, মনিরুজ্জামান, মাহফুজুর রহমান, সুমন সাহা, আবদুল জলিল শেখ, রফিক মণ্ডল, আফজাল হোসেন খান, খন্দকার শাহিন আহমেদ ও আরিফুর রহমান (দোলন)।

বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে ২০২০ সালের ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনী-২০১৫-এর ৪(২) ধারায় এ মামলা করা হয়। ওই মামলা তদন্ত করে গত বছরের ৩ মার্চ আদালতে বরকত, রুবেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।

পরে আদালতে অভিযোগ গঠন বিষয় শুনানি হয়। তবে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের জবানবন্দিতে অনেকের নাম উঠে আসে। তবে তাঁদের বিষয় তদন্ত না করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। পরে আদালত গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ স্বপ্রণোদিত হয়ে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এতে নতুন করে আরও ৩৭ জন আসামি হলেন।

এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন আসামি সাজ্জাদ হোসেন বরকত, ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী ও আশিকুর ফারহান। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের ৫ হাজার ৭০৬ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে ১৮৮টি ব্যাংক হিসাবে থাকা তাঁদের প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাঁদের মালিকানাধীন ৫৫টি বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়িও জব্দের আদেশ দেন আদালত।