অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালা বিষয়ে রিভিউ আবেদনে আদেশ রোববার

সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি

অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালা গ্রহণ করে সাত বছর আগে দেওয়া আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা (রিভিউ) আবেদনের ওপর আদেশের জন্য আগামী রোববার (২৯ জুন) দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আদেশের এ দিন ধার্য করেন।

বিচার বিভাগ পৃথক্‌করণ–সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা-২০১৭ প্রজ্ঞাপন আকারে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়। এই বিধিমালা গ্রহণ করে ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি আদেশ দেন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ। এই আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরসহ আট আইনজীবী গত মাসে আপিল বিভাগে আবেদন (রিভিউ) করেন। আবেদনটি গত ২১ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার শুনানি হয়।

আদালতে পুনর্বিবেচনার আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন।

এর আগে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। মাসদার হোসেন মামলাটি নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকসংক্রান্ত মামলা হিসেবে পরিচিত। এই মামলার রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।

আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর আইন মন্ত্রণালয় বিধিমালার একটি খসড়া তৈরি করে ২০১৬ সালের ৭ মে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী বলে জানান আপিল বিভাগ। সর্বশেষ সংশোধিত খসড়া তৎকালীন প্রধান বিচারপতির কাছে ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই জমা দেয় আইন মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্ট কমিটির সংশোধনী অনুসারে সরকার বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করবে বলে আশা করে ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট আদেশ দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৯ সদস্যের আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচার বিভাগের ওপরে আক্রমণ করে যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে (বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) দেশ থেকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার পর ওই শৃঙ্খলা বিধিমালা গ্রহণ করা হয়েছিল দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে, যেখানে নয়জন বিচারপতি এর আগে ভিন্ন আদেশ দিয়েছিলেন; সেখানে পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতির (বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) পদত্যাগ এবং নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পরে পাঁচজন বিচারপতির মাধ্যমে ওই শৃঙ্খলা বিধিমালা গ্রহণ করা হয়। অথচ শৃঙ্খলা বিধিমালা ছিল অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য সবচেয়ে বেশি অবমাননাকর, অমর্যাদাকর ও তাঁদের স্বাধীনতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। কারণ, তাঁদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ও শৃঙ্খলা—সবকিছুই আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। ওই আদেশ রিভিউ চেয়েই আবেদনটি করা হয়।’