বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) বিভিন্ন বাফার গুদামে সরবরাহ না করা প্রায় ৭২ মেট্রিক টন সার আত্মসাতের অভিযোগ ঘিরে স্বতঃপ্রণোদিত রুলে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ রোববার আবেদনটি জমা দেন পোটন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কামরুল আশরাফ খানের আইনজীবী। শুনানি নিয়ে আদালত এ বিষয়ে আগামীকাল আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।
‘আত্মসাৎ ৫৮২ কোটি টাকার সার’ শিরোনামে গত ৫ জানুয়ারি প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আসার পর সেদিন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। হাইকোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ওই অভিযোগ অনুসন্ধান করে শিল্পসচিব ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যানকে চার মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর সংবাদপত্রে উল্লেখিত বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে ১১ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে বিসিআইসি। ওই অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক ইতিমধ্যে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বলে সেদিন আদালতকে জানান সংস্থাটির আইনজীবী। দুদককে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে আদালত ২৩ জুলাই পরবর্তী দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আজ আদেশের জন্য কার্যতালিকায় ওঠে।
আদালতে বিসিআইসির পক্ষে আইনজীবী মোল্লা কিসমত হাবিব, দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং বিএফআইইউর পক্ষে আইনজীবী কামরুন নেছা রত্না শুনানিতে ছিলেন। কামরুল আশরাফ খানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানজিব উল আলম ও আসিফ বিন আনওয়ার। প্রথম আলোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার।
পরে আইনজীবী আসিফ বিন আনওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, রুলে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হতে কামরুল আশরাফ খান আবেদনটি করেছেন। আদালত আগামীকাল আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।
বিএফআইইউর পক্ষে আইনজীবী কামরুন নেছা রত্না প্রথম আলোকে বলেন, আদেশের পর গত ১৩ এপ্রিল নোটিশ পায় বিএফআইইউ। এরপর বিভিন্ন ব্যাংক থেকে স্টেটমেন্ট নিয়েছে—এসব তথ্য পর্যালোচনা চলছে। অনুসন্ধান করে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। এ হিসেবে আগামী ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় আছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারিভাবে আমদানি করা ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার বন্দর থেকে খালাসের পর গুদামে পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে পরিবহনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫৮২ কোটি টাকা। মেসার্স পোটন ট্রেডার্স সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানের (পোটন) মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। কামরুল আশরাফ খান সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সভাপতি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, তিনিই মূলত দেশে সারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পোটন ট্রেডার্স যে সার আত্মসাৎ করেছে, তা উঠে এসেছে সারের আমদানিকারক শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি প্রতিষ্ঠান বিসিআইসির দুটি তদন্তে। সারগুলো খালাস হয়েছিল ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৫ মের মধ্যে। সার সরবরাহ না করার পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি বিসিআইসি। সর্বশেষ গত বছরের ২০ ডিসেম্বর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে বিসিআইসির পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়।
আদালতে ১১ জুলাই দাখিল করা বিসিআইসির প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের ২০২১–২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) বিভিন্ন বাফার গুদামে সরবরাহ না করা মোট সারের পরিমাণ প্রায় ৭২ হাজার মেট্রিক টন। এই সারের ক্রয়মূল্যের সঙ্গে অন্য খরচ যোগ করলে বিসিআইসি তথা সরকারের মোট ক্ষতি প্রায় ৫৮২ কোটি টাকা, যা গত ৫ জানুয়ারি প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।