ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা
প্রায় অর্ধেক আক্রান্ত হলেও ৮২ শতাংশই সাইবার নিরাপত্তাকে প্রাসঙ্গিক মনে করেন না
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৮২ শতাংশই সাইবার নিরাপত্তাকে তাঁদের জন্য প্রাসঙ্গিক মনে করেন না। যদিও তাঁদের প্রায় ৪০ শতাংশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাইবার হামলার শিকার হয়েছেন।
বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ইউএসএইডের সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল ডিজিটাল ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের অধীনে ডিজিটাল ব্যবসায় সাইবার নিরাপত্তা ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ‘ব্যবসায় ডিজিটাল সুরক্ষা’ নামে ক্যাম্পেইনটি বাস্তবায়ন করছে পরামর্শক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্সপিরা।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে একটি জরিপ করে ইন্সপিরা। জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয় এ অনুষ্ঠানে। এ বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের সাতটি জেলা—ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, বগুড়া ও যশোরের ৫০০ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার মধ্যে জরিপটি চালানো হয়।
জরিপে বলা হয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৪৭ শতাংশ তাঁদের ব্যবসার জন্য ডিজিটাল টুলস ও ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এ ছাড়া ৪০ শতাংশ উদ্যোক্তা ব্যক্তিগত খরচের প্রয়োজনে ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। ই-কমার্স ও এফ-কমার্স ব্যবসার বার্ষিক বৃদ্ধির হার গত ৫ বছরে ৭২ শতাংশ; অর্থাৎ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল রূপান্তরের ভবিষ্যৎ ভালো। উদ্যোক্তাদের মধ্যে যাঁরা তাঁদের কাজের প্রতি নিবেদিত, তাঁদের ৮২ শতাংশ এবং পিছিয়ে থাকাদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ সাইবার ও অনলাইন নিরাপত্তা শব্দ দুটি সম্পর্কে শুনেছেন। তবে বিস্তারিত তেমন কিছু তাঁরা জানেন না।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান বিজিডি ই-গভ সার্ট চিহ্নিত সবচেয়ে বেশি সাইবার হুমকি হচ্ছে র্যানসামওয়ার, ম্যালওয়ার, ফিশিং ও স্প্যাম। জরিপে অংশ নেওয়া উদ্যোক্তাদের মাত্র ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এ ৪টি সম্পর্কে জানেন।
উদ্যোক্তাদের ৩৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা বা তাঁদের কাছের কেউ সাইবার হামলার শিকার হয়েছিলেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা জালিয়াতি, ব্যবসাসংক্রান্ত তথ্য চুরি, স্ক্যাম, ফিশিং লিংক/ক্লিকবেটের মতো সাইবার হামলার ঝুঁকিতে থাকেন।
ইন্টারনেটে কোনো খবর দেখলে ৫৬ শতাংশ তাঁর সত্যতা যাচাই করেন না। এ ছাড়া ফেসবুকে যা দেখেন, তা সত্যি বলে ধরে নেন অনেকে। এই উদ্যোক্তাদের ৮০ শতাংশের বেশির ভাগের সত্যতা যাচাইয়ের অভ্যাস নেই।
আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে উদ্যোক্তারা সাইবার হামলার শিকার হলে আইনি ব্যবস্থা নিতে চান না। ক্ষতিগ্রস্তদের ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছেন। যেখানে ভুক্তভোগীদের বড় অংশই জানেন না কীভাবে অভিযোগ জানাতে হয়।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতির প্রচার, হটলাইন সম্পর্কে সচেতন করাই এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য। উদ্যোক্তাদের সম্ভাব্য সাইবার হুমকি মোকাবিলা করতে তথ্য, অনলাইন শিক্ষা উপকরণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। এর আওতায় আগামী ৮ মাসে ১০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে সাইবার নিরাপত্তা, হামলা এবং সুরক্ষিত থাকার উপায় সম্পর্কে জানানো হবে।
ইএসএইডের সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল ডিজিটাল ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের প্রধান আকলিমা হক বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। তাই ডিজিটাল ব্যবসার ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে এ-সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়েও জানতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান, অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রকল্পের পরিচালক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির ও সহকারী পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বক্তব্য দেন।