চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীর ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে প্রায় তিন মাস ধরে। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলেও কবে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট বাড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা হয়েছিল গত ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শিক্ষক ও কর্মকর্তারা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় শ্রেণি কার্যক্রম। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৯ আগস্ট থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিন্ডিকেট। তবে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে আবাসিক হল বরাদ্দের কার্যক্রমও। ৫ আগস্টের পর পদত্যাগ করেন উপাচার্যসহ প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত থাকা অন্তত ৪০ শিক্ষক। ১৮ সেপ্টেম্বর নতুন করে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।
বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে, জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে হলে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত লাগবে। সিন্ডিকেট সভার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই এ ব্যাপারে বলা যাচ্ছে না।’
দেশের স্বায়ত্তশাসিত চার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়েই এখন পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু হয়েছে ২২ সেপ্টেম্বর। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ ফেসবুকে সমালোচনাও করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা থেকে দূরে। যত দ্রুত সম্ভব ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সেশনজটের শঙ্কায় মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।’
যা বলছে প্রশাসন
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত থাকা একাধিক ব্যক্তি জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ তুলনামূলক পরে হওয়া ক্লাস-পরীক্ষা শুরুতে বিলম্বের অন্যতম কারণ। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় নিয়মিত আসন বরাদ্দ দেওয়া হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তা হয়নি। সর্বশেষ নিয়ম মেনে ছাত্রদের হল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালের জুনে। এরপর থেকে ছাত্রলীগই এসব হল এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ তানভীর হায়দার আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে হলে আগে হল খুলতে হবে। নিয়মমতো হল বরাদ্দ থাকলে গতকালই তাঁরা হল খোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্যই কম সময়ের মধ্যে সব হলে প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য তাঁরা দ্রুতগতিতে কাজ করছেন। ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আর সেশনজট দূর করাই তাঁর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।