ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে রেললাইনে থাকবে পাহারা ও টহল

১৬ মার্চ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের তেজের বাজার এলাকায় বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনার পর উৎসুক জনতার ভিড়ছবি: সংগৃহীত

দুই দিনের ব্যবধানে বড় ধরনের দুটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন যাত্রীরা। রেলের সম্পদেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থেকেছে ট্রেন চলাচল। এলোমেলো হয়ে পড়েছিল ট্রেনের সময়সূচি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও গন্তব্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হয়েছে যাত্রীদের। এই দুটি ট্রেন দুর্ঘটনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় নিরাপদ ট্রেন চলাচলের বিষয়ে তৎপর হয়েছে রেলওয়ে। ট্রেনে ঈদযাত্রার সময় যাত্রীরা যাতে কোনো দুর্ঘটনার মুখে না পড়েন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চার নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনা অনুযায়ী রেললাইনে থাকবে নজরদারি ও টহল।

গতকাল রোববার রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। অফিস আদেশে বলা হয়েছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সময়মতো ট্রেন পরিচালনা করতে হবে।

এ সময় যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ নিশ্চিত করতে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে সার্বক্ষণিকভাবে টহলের ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রেল দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি, যাত্রী ভোগান্তি এবং ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয়ের কারণে রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে চারটি নির্দেশনা পালন করা জরুরি।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৩ এপ্রিল ঈদের বিশেষ ট্রেন চলাচল শুরু হবে। চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। আর ঈদযাত্রার জন্য ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি গতকাল শুরু হয়েছে। গত ১০ দিনে রেলওয়ে বড় ধরনের দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। ১৬ মার্চ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলস্টেশন-সংলগ্ন ঢালুয়া ইউনিয়নের তেজের বাজার এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। লাইনচ্যুত হওয়ার পর বগিগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের উভয় লাইনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। এতে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচল শুরু হতে তিন দিন সময় লাগে।

এর দুই দিন পর ১৮ মার্চ রাতে টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনের একটি বগির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে এই বড় দুটি ট্রেন দুর্ঘটনার পর নিরাপদ যাত্রার ব্যাপারে তৎপর হয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঈদের সময় ঘরমুখী মানুষ নতুন করে কোনো দুর্ঘটনার কবলে না পড়েন, সে জন্য ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চারটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনাগুলো হলো: ১. ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রেলওয়ের রেলপথগুলো (ট্র্যাক) ওয়েম্যান ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে দিনে ও রাতে সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য প্রতিটি নিয়ন্ত্রণকক্ষে কর্তব্যরত ওয়েম্যান ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মুঠোফোন নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে। ২. প্রয়োজনে মোটর ট্রলি দিয়ে রেলওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী এবং জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলীদের অধীন থাকা কর্মীদের সমন্বয়ে টহল দিতে হবে। ৩. স্টেশনমাস্টার, পরিদর্শক ও জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলীরা নিজ নিজ এলাকার রেলওয়ে ট্র্যাক (রেলপথ) সার্বক্ষণিক তদারকি এবং তা নিয়ন্ত্রণকক্ষকে অবহিত করবেন। ৪. প্রত্যেক বিভাগীয় প্রকৌশলীরা টহল কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করবেন।

নিরাপদ যাত্রার জন্য চার ধরনের নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম।