সরাইলে গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী গ্রেপ্তার

হাতকড়া
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় গৃহবধূ নয়ন তারাকে (৩২) দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে তাঁর স্বামী চান মোহাম্মদ ওরফে চান মোস্তফাকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার ভোরে উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তী এলাকার নিউ আশা ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে শুক্রবার রাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় জখমের শিকার দুজন জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

নিহত নয়ন তারা ও তাঁর স্বামী চান মোহাম্মদ কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর দুজনই সরাইলের ওই ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন।

পুলিশ ও ইটভাটার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৩ বছর আগে নিকলী উপজেলার টেঙ্গুরিয়া গ্রামের চান মোহাম্মদের সঙ্গে একই উপজেলার ঘোড়াদিঘি গ্রামের কালা মিয়ার মেয়ে নয়ন তারার বিয়ে হয়। তাঁদের দুই ছেলেসন্তান আছে। তাজিম মিয়া নামের এক সন্তান নিয়ে ধরন্তী হাওর এলাকার নিউ আশা ব্রিকস নামের ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন তাঁরা। শুক্রবার রাতে ইটভাটায় ছোট একটি ঘরে তাঁরা ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত তিনটার দিকে তাজিম মিয়া (১২) ও তাঁর ভাই লাদিম মিয়ার (৭) চিৎকারে আশপাশের ঘরে থাকা অন্য শ্রমিকেরা এগিয়ে আসেন। এ সময় তাঁরা ঘরে নয়ন তারার রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। আর চান মোহাম্মদের হাতে দেখতে পান রক্তমাখা দা। তখন যাঁরাই ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁদের দিকে তেড়ে আসছিলেন চান মোহাম্মদ। তিনি একপর্যায়ে নয়ন তারার বড় বোন জয়নব বেগম (৩৮) ও তাঁর স্বজন সাগর মিয়াকে (১৮) দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। পরে ইটভাটার লোকজন চান মোহাম্মদকে বাঁশ দিয়ে মাথায় আঘাত করে আটক করেন। জখমের শিকার জয়নব বেগম ও সাগর মিয়াকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চান মোহাম্মকেও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় নিহত নয়ন তারার ভাগনে শিমুল মিয়া (২৭) বাদী হয়ে চান মোহাম্মদকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

কিশোর তাজিম মিয়া বলে, ‘রাইতে ঘুমাইয়া ছিলাম। হঠাৎ কইরা দেখি, আব্বু মারে দা দিয়া কোপাইতাছে। আম্মু ওইখানেই মইরা গেছে। তখন আমরা দুই ভাই ঘরেই ছিলাম।’

নিউ আশা ব্রিকসের মালিক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ইটভাটার নির্মিত ঘরে ১৭টি পরিবার থাকে। এর অধিকাংশই নয়ন তারার আত্মীয়স্বজন। আমার ভাটার কাজ শেষ। আজ (শনিবার) সবাই বাড়িতে চলে যাওয়ার কথা ছিল। হঠাৎ করে কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। আগের রাতে তাঁদের মধ্যে কোনো ঝগড়া হওয়ার ঘটনাও শুনিনি। তাঁরা তিন বছর ধরে আমার এখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছে।’

নিহত গৃহবধূ নয়ন তারার মাথায়, ঘাড়ে, পিঠে ও হাতে দায়ের কোপের চারটি চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী সরাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তারিকুল ইসলাম।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে চান মোহাম্মদ তাঁর স্ত্রীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। পরে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আর গৃহবধূর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে।