১৫ আগস্টে নিহত ব্যক্তিদের নাম নেই বনানী কবরস্থানের নিবন্ধন খাতায়

মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টে অন্য শহীদদের সমাধিতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। গতকাল রাজধানীর বনানী কবরস্থানে
ছবি: বাসস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নিহত ব্যক্তিদের দাফন করা হয়েছিল ঢাকার বনানী কবরস্থানে। কিন্তু কবরস্থানের নিবন্ধন খাতায় তাঁদের কারও নাম নেই।

সম্প্রতি একটি গবেষণা করতে গিয়ে গবেষকদের কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার বনানী কবরস্থানের নিবন্ধন খাতা দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ নিয়ে কথা হয় কবরস্থানের ইমাম আবদুল্লাহ আল মাহমুদের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই কবরস্থানে যাঁকেই দাফন করা হয়, তাঁর নাম নিবন্ধন খাতায় তোলা হয়। এটাই নিয়ম।

ঘাতকেরা চেয়েছিল সবার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে। এ কারণে নিবন্ধন খাতায় নাম লেখেনি। এটা জানার পর আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। মন্ত্রণালয় সবকিছু ঠিক করার অনুমতি দিয়েছে।
আতিকুল ইসলাম, মেয়র, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

১৫ আগস্টে নিহত ব্যক্তিদের নাম খাতায় নেই কেন, এ প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘আমি দায়িত্বে আছি ১৭ বছর ধরে। ১৯৭৫ সালে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, বিষয়টি তাঁরা বলতে পারতেন। তবে তাঁরা এখন আর কেউ এখানকার কাজের সঙ্গে নেই।’

বনানী কবরস্থান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন। উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাতকেরা চেয়েছিল সবার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে। এ কারণে নিবন্ধন খাতায় নাম লেখেনি। এটা জানার পর আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। মন্ত্রণালয় সবকিছু ঠিক করার অনুমতি দিয়েছে।’

মূল ফটক দিয়ে বনানী কবরস্থানে ঢুকলেই হাতের বাঁ পাশে এক সারিতে ১৫ আগস্টে নিহত ব্যক্তিদের কবর (বঙ্গবন্ধু ছাড়া)। সেখানে একটি ফলকে ১৮ জনের নাম ও বয়স লেখা। ১ নম্বরে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম।

নিয়ম অনুয়ায়ী বনানী কবরস্থানে প্রতিটি কবরের একটি করে নম্বর আছে। কিন্তু ১৫ আগস্টে নিহত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তা নেই।

বনানী কবরস্থানের পুরোনো নিবন্ধন

খাতার মধ্যে ২ নম্বর খাতায় ১৯৭৫ সালের ২ জুলাই থাকে ১৯৭৬ সালের ২৮ জুন পর্যন্ত দাফন করা ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। ওই খাতায় দেখা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৩ আগস্ট নসির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির নাম। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর মো. মতিউর রহমান নামের আর এক ব্যক্তির নাম। অর্থাৎ ১৩ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আর কারও নাম নিবন্ধিত হয়নি।

নিয়ম অনুয়ায়ী বনানী কবরস্থানে প্রতিটি কবরের একটি করে নম্বর আছে। কিন্তু ১৫ আগস্টে নিহত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তা নেই।

আরও পড়ুন

যেভাবে বিষয়টি জানা গেল

করোনা মহামারিতে কবরস্থানগুলোয় মৃতদেহ আনা বেড়েছিল কি না, তা জানতে ২০২০ সালের শেষে গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছিল আইসিডিডিআরবি। গবেষকেরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কবরস্থানগুলোর তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি কবরস্থানের তথ্য ডিজিটালাইজ করায় সহায়তা করে। আইসিডিডিআরবিকে সমর্থন দিচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন কবরস্থানগুলোতে সমাহিত ব্যক্তিদের একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করেছেন গবেষকেরা। তথ্য যাচাইয়ে গত জুনে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও গবেষকেরা দেখতে পান ১৫ আগস্টে নিহত ব্যক্তিদের কারও নাম বনানী কবরস্থানের নিবন্ধন খাতায় নেই। এরপরই নাম অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেন আতিকুল ইসলাম।

আরও পড়ুন