নোয়াখালীতে মাসব্যাপী গ্যাস–সংকটে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পে স্থবিরতা

টিমটিম করে জ্বলছে গ্যাস। তাতে রান্নায় লাগছে অনেক বেশি। আজ সকালে জেলা শহর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকা থেকে তোলাছবি: প্রথম আলো।

নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে এক মাস ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এতে বিপাকে পড়েছেন জেলার প্রায় ৩০ হাজার আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প গ্রাহক। গ্যাসের চাপ কম থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছেন না সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা। এ ছাড়া গ্যাস–সংকটে স্থবিরতার মুখে পড়েছে জেলার বাণিজ্য ও শিল্প কারখানাগুলো।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা উম্মে সালমার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ভাত রান্নার জন্য চুলার ‍ওপর পাতিল বসানো। কিন্তু চুলায় আগুন জ্বলছে একেবারেই অল্প আঁচে। উম্মে সালমা বলেন, এক মাস ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। প্রতিদিন ভোরে উঠে নাশতা তৈরি করতে না করতেই গ্যাসের সরবরাহ কমে যায়। দুপুর গড়িয়ে গেলেও গ্যাসের চাপ বাড়ে না। চুলার ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখেও রান্না শেষ করা যায় না।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. জহির বলেন, গ্যাসের সংকটের কারণে জেলার সিএনজি স্টেশনগুলোতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। গ্যাস পাওয়া গেলেও চাপ কম থাকে। এতে তাঁদের অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। মাইক্রোবাসের চালক আইয়ুব আলী বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালীর চারটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন ঘুরে সেতুভাঙ্গা এলাকায় গিয়ে অনেক কষ্টে গ্যাস ভরেছেন। আজ দুপুরে গিয়ে দেখেন গ্যাসের চাপ নেই।

নোয়াখালীতে গ্যাস সরবরাহ করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এই কোম্পানির নোয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীতে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার ২১৫। এর মধ্যে বাণিজ্যিক গ্রাহক ২০০ ও শিল্প গ্রাহক ৩০ জন। জেলায় প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা প্রায় ১৬ বিলিয়ন ঘনফুট। সেখানে কাজিরহাট গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ পাওয়া যায় প্রায় ১১ বিলিয়ন ঘনফুট। তা–ও শীতের কারণে গ্যাসের চাপ কম থাকে। কাজিরহাটে গ্যাস পর্যাপ্ত না হওয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে এত দিন বাকি পাঁচ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত। গতকাল শুক্রবার থেকে তা–ও বন্ধ রয়েছে।

শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুমাইয়া আক্তার বলেন, বাসাবাড়িতে সকালে ও দুপুরের দিকে গ্যাসের বেশি দরকার। তখনই গ্যাস থাকে না। সকালে স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাদের জন্য নাশতা তৈরি করাসহ রান্নাবান্না নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়। সপ্তাহখানেক আগে বাধ্য হয়ে এলপিজি সিলিন্ডার কিনে এনেছেন তিনি। এখন সিলিন্ডারও কিনতে হচ্ছে আবার মাস শেষে গ্যাসের বিলও দিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হয় বাখরাবাদের নোয়াখালী কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সফিউল আলমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালীর দুটি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জের সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে কিছুদিন ধরে সরবরাহ অনেকটা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বেগমগঞ্জের কাজিরহাট গ্যাসক্ষেত্র থেকে জেলায় গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কিন্তু শীতের কারণে চাপ কমে যাওয়ায় কিছুদিন ধরে গ্যাসের সংকট চলছে। তবে শীতের পর এই সংকট কেটে যাওয়ার আশা করছেন তাঁরা।