কম দামে বিদ্যুৎ দেবে মাতারবাড়ী কেন্দ্র, আজ উদ্বোধন

জাপানের ঋণসহায়তায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রীর এটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের আজ উদ্বোধন করা হবে। গতকাল সকালে মাতারবাড়ীতে
ছবি: রুহুল বয়ান

বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কমাতে কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার পরও খরচ কমছিল না। কয়লা থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ১২ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। এতে গ্যাস, তেল, কয়লা ও অন্যান্য জ্বালানি মিলে গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ হচ্ছে প্রায় ১১ টাকা। তবে প্রতি ইউনিট ১০ টাকার কমে বিদ্যুৎ দেবে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

জাপানের ঋণসহায়তায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে। ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এ কেন্দ্রে। প্রথম ইউনিট আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। একই সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট আগামী মাসের শেষ দিকে চালু হতে পারে।

সূত্রগুলো বলছে, কয়লা পরিবহন খরচ কম হওয়ায় ও সহজ শর্তে ঋণের কারণে মাতারবাড়ী কেন্দ্র তুলনামূলক কম দামে বিদ্যুৎ দিতে পারবে।

চাহিদা থাকলে প্রথম ইউনিটের পুরোটা সরবরাহ করা যাবে। পর্যাপ্ত কয়লাও মজুত আছে। ডিসেম্বরেই দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১০ টাকার কাছাকাছি হতে পারে। পিডিবিকে ইতিমধ্যে দাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ

দেশে আমদানি করা কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মাতারবাড়ী কেন্দ্র। গত ২৯ জুলাই থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করছে কেন্দ্রটি। এর পর থেকে চাহিদা বুঝে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এক দিনে সর্বোচ্চ ৬১৮ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করেছে কেন্দ্রটি।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মালিকানা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) হাতে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও গভীর সমুদ্রে একটি টার্মিনাল করেছে তারা। এতে কয়লা পরিবহন সহজ হয়েছে। দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা পরিবহনে খরচ বেশি। গভীর সমুদ্রে আসা বড় জাহাজ থেকে কয়লা নিয়ে ছোট জাহাজে করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে আনা হয়। মাতারবাড়ীর ক্ষেত্রে এটি সরাসরি বড় জাহাজে করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে চলে আসছে।

আরও পড়ুন

এই প্রকল্পে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণসহায়তা দিয়েছে ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। সরকারি তহবিল থেকে অর্থায়ন হয়েছে ৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। আর কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়ন ১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। তবে বরাদ্দের চেয়ে খরচ কিছুটা কমতে পারে বলে নিশ্চিত করেছে প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় এ কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ পাঠানো যাচ্ছে না। মাতারবাড়ী থেকে বিদ্যুৎ আসছে সরাসরি নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট উপকেন্দ্রে। ঢাকা অঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বেশি থাকায় মাতারবাড়ী থেকে বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা নেই এখন। তাই পুরো সক্ষমতায় উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

সিপিজিসিবিএল সূত্র বলছে, সহজ শর্তে ঋণ দিয়েছে জাইকা। মোট সাতটি ঋণ চুক্তির মাধ্যমে এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঋণ চুক্তি সম্পন্নের সময় থেকে পরবর্তী ১০ বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধে অব্যাহতি আছে। এ হিসাবে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে ২০২৫ সাল থেকে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যৌথভাবে নির্মাণ করেছে জাপানের ঠিকাদারি সংস্থা সুমিতোমো করপোরেশন, তোশিবা এনার্জি সিস্টেমস ও সলিউশন করপোরেশন অ্যান্ড আইএইচআই করপোরেশন। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি হিসেবে পরিচিত। এটি কয়লা থেকে পরিবেশদূষণ কমাবে।

প্রকল্প সূত্র বলছে, পূর্ণ সক্ষমতায় চালাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিদিন ১৩ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হতে পারে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬০ দিনের কয়লা মজুত করার মতো সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। বড় জাহাজ বন্দরে পৌঁছার জন্য ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩০০ মিটার প্রশস্ত চ্যানেল খনন করা হয়েছে। যার গভীরতা সাড়ে ১৮ মিটার। ৮০ হাজার টনের কয়লাবাহী জাহাজ এখানকার বন্দরে আসতে পারবে। কয়লা খালাসে সর্বোচ্চ দুই দিন লাগতে পারে।

আরও পড়ুন

সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় এ কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ পাঠানো যাচ্ছে না। মাতারবাড়ী থেকে বিদ্যুৎ আসছে সরাসরি নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট উপকেন্দ্রে। ঢাকা অঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বেশি থাকায় মাতারবাড়ী থেকে বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা নেই এখন। তাই পুরো সক্ষমতায় উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদা থাকলে প্রথম ইউনিটের পুরোটা সরবরাহ করা যাবে। পর্যাপ্ত কয়লাও মজুত আছে। ডিসেম্বরেই দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১০ টাকার কাছাকাছি হতে পারে। পিডিবিকে ইতিমধ্যে দাম প্রস্তাব করা হয়েছে।