তারেক-মিশুকের মৃত্যু: ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা দুই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর।

তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর

এক যুগ আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিশুক মুনীরের পরিবারের করা ক্ষতিপূরণের পৃথক দুটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনো হয়নি।

তারেক মাসুদের পরিবারের করা মামলায় হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। মামলাটি এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায়। অন্যদিকে মিশুক মুনীরের পরিবারের করা ক্ষতিপূরণ মামলাটি হাইকোর্টে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন

দুই পরিবারের অন্যতম আইনজীবী রমজান আলী শিকদার গতকাল শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তারেক মাসুদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ মামলায় হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, এর বিরুদ্ধে বাসের মালিকপক্ষ এবং বাদীপক্ষের করা পৃথক আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে। শিগগিরই শুনানি শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে মিশুক মুনীরের পরিবারের করা ক্ষতিপূরণ মামলায় বিবাদীপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য হাইকোর্টে ১৬ আগস্ট দিন ধার্য রয়েছে। 

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর। তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরও তিনজন। 

আরও পড়ুন

দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের সঙ্গে নিহত হন মাইক্রোবাসের চালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রোডাকশন সহকারী ওয়াসিম হোসেন ও জামাল হোসেন। আহত হন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, শিল্পী ঢালী আল মামুন ও তাঁর স্ত্রী দিলারা বেগম জলি। তাঁরা কাগজের ফুল ছবির জন্য শুটিং স্পট দেখে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন।

এই দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ঘিওর থানায় মামলা করে। ঘটনার প্রায় ছয় বছর পর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অধস্তন আদালতের রায়ে বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানা করা হয়। কারাবন্দী থাকা অবস্থায় বাসচালক ২০২০ সালের ১ আগস্ট মারা যান। 

এদিকে দুর্ঘটনার পর ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের পরিবার মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাসমালিক, চালক ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পৃথক মামলা করে। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা দুটি পরে হাইকোর্টে বদলি হয়। এর মধ্যে তারেক মাসুদের পরিবারের করা মামলায় ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ দিতে রায় দেন। রায়ে তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়। 

হাইকোর্টের রায়ের পর বাসমালিকপক্ষ ও বাদীপক্ষ ২০১৯ সালে পৃথক আপিল বিভাগে পৃথক আপিল করে। পৃথক আপিল দুটি ৯ আগস্ট একসঙ্গে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ২১ নম্বর ক্রমিকে ছিল। তবে সেদিন শুনানি হয়নি। অন্যদিকে মিশুক মুনীরের পরিবারের পক্ষে করা ক্ষতিপূরণ মামলাটির কার্যক্রম বিচারপতি জি বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে চলছে। সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।

মিশুক মুনীরের স্ত্রী মঞ্জুলি কাজী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেভাবে মামলাটির কার্যক্রম চলছিল, করোনার মহামারি না এলে এত দিনে নিশ্চয়ই রায় পেয়ে যেতাম। আশা করি, দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি হবে এবং আমরা ন্যায়বিচার পাব।’