যেভাবেই হোক নাতিকে বাঁচাতে চান তিনি

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত নাতি আবিরের সঙ্গে ফাতেমা বেগমছবি: সংগৃহীত

ছোট বোনের কোনো মেয়ে নেই বলে খুব শখ করে নিজের মেয়ে এলিনা বেগমকে বোনের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই শখই যেন কাল হয়ে দাঁড়াল ফাতেমা বেগমের (৬০)। জানা ছিল না, আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে হলে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। নাতি আবিরের (১৩) জন্মের এক বছরের মাথায় ধরা পড়ে রক্তের জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়া। আর এটিকে কেন্দ্র করে নিত্যদিন মেয়ের সংসারে কলহ এবং পরে বিচ্ছেদ।

এরপরে মেয়ে ও নাতিকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। সেই থেকেই শুরু ফাতেমা বেগমের জীবনসংগ্রাম। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত নাতি ও অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে, রাজধানীর খিলগাঁও সিপাহীবাগে এক রুমের একটি টিনশেড ঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন ফাতেমা বেগম। ‘মাইয়াটা আগে গার্মেন্টসে কাজ করত। হঠাৎ কইরা একদিন মাথা ঘুইরা পইরা গেল ফ্যাক্টরিতে। এরপর থেইকা আর কোনো কাজ করতে পারে না ও’—অসুস্থ নাতির পাশে বসে চোখের পানি মুছতে মুছতে নিজের কষ্টের কথাগুলো বলা শুরু করেন ফাতেমা বেগম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি যখন শয্যাশায়ী, তখন বাধ্য হয়েই বৃদ্ধ বয়সে সংসারের হাল ধরেন তিনি। এই বয়সে এত কষ্ট করেন কেন, জানতে চাইলে ফাতেমা বেগমের সরল উক্তি, ‘কষ্ট না করলে পোলাডা খাইব কী? চিকিৎসা করামু ক্যামনে? ওর লাইগা আমি ১০ জনের কাছে হাত পাততেও রাজি আছি।’

দুস্থ এই পরিবারের অসহায়ত্বের কথা বলতে গিয়ে শিউরে ওঠেন প্রতিবেশীরাও। ফাতেমা বেগমের প্রতিবেশী কুলসুম বানু বলেন, নাতিকে বাঁচাতে এই বয়সে এসেও হাতের সামনে যা কাজ পান, তাই করেন এই বৃদ্ধা। তবে বয়স্ক হওয়ায় অনেক সময় কাজ পান না ফাতেমা বেগম। তখন বাধ্য হয়েই মানুষের কাছে হাত পাততে হয় তাঁর। টাকার অভাবে নাতি বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে, এই ভয়টা সব সময়ই কাজ করে তাঁর মনে। তবে অনেক বছর ধরে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের ফান্ড থেকে আবিরের চিকিৎসা হওয়াতে কিছুটা হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন এই বৃদ্ধা।

আবিরের রক্ত নেওয়ার তারিখে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনে গিয়ে কথা হয় সেখানকার প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানজিম মোহাম্মদ সিদ্দিকির সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আবিরের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় হাসপাতালের জাকাত ফান্ড থেকে তাঁর চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হচ্ছে। শুধু তা–ই নয়, আবিরকে রক্তও বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।’ কর্তব্যরত চিকিৎসক সাজিয়া ইসলাম বলেন, ‘আবিরের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে তার চিকিৎসা নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসা না পেলে আবিরের মতো রোগীদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে কষ্ট হয়ে যায়।’

জানা গেছে, আবিরের মতো এমন হাজারো দুস্থ শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন। হাসপাতালের জাকাত ফান্ডের আওতায় তাদের দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসহ ওষুধ ও রক্ত। এমনকি দূর থেকে আসা রোগীদের বিনা মূল্যে থাকা-খাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে নিবাসের। আসহায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে সবাইকে জাকাত ফান্ডে জাকাত দান করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।

হাজারো শিশুর জীবন বাঁচাতে আপনার জাকাত পাঠাতে পারেন নিম্নোক্ত ঠিকানায়—

১. ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম: বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন (জাকাত ফান্ড), অ্যাকাউন্ট নং: ১০৮১১০০০৩৭৭০৩, ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক, শান্তিনগর শাখা, ঢাকা।

অন্যান্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তালিকা - www.thals.org/banks

ব্যাংকে জমা দেওয়া টাকা পৌঁছেছে কি না, নিশ্চিত হতে ডিপোজিট স্লিপ/ই-ট্রান্সফার আডভাইস ইনবক্সে বা [email protected] ঠিকানায় ই–মেইল করে পাঠান। ফাউন্ডেশন কর্তৃক আপনাকে মানি রিসিট দেওয়া হবে।

২. অনলাইনে ভিসা, মাস্টারকার্ড বা আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডের মাধ্যমে দান করতে: www.thals.org/zakat

৩. বিকাশ/নগদ/উপায় মার্চেন্ট নম্বর: ০১৭২৯২৮৪২৫৭

‘পেমেন্ট’ অপশন ব্যবহার করে কাউন্টার নম্বরে ‘0’ দিন।

ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.thals.org/zakat-for-life ঠিকানায়।