‘জীবন বাঁচাতে এবং জীবন সাজাতে মেরিল’, ‘ঝলমল কালো চুলের জন্য কিউট শ্যাম্পু’ অথবা ‘আলো আলো বেশি আলো’ জিঙ্গেলের অলিম্পিক ব্যাটারির মতো অসংখ্য জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে বিজ্ঞাপন সংস্থা ‘মাত্রা’। এই সব কাজের সঙ্গে ক্যামেরার সামনে থাকা মডেলরা যেমন নক্ষত্র, তেমনি ক্যামেরার পেছনে থাকা কারিগরেরাও সমান গুণী। মডেল, কণ্ঠশিল্পী, আলোকচিত্রী, গায়ক সবার কাজের নিষ্ঠার জন্যই মাত্রার পক্ষে সম্ভব হয়েছে মানোত্তীর্ণ আধুনিক বিজ্ঞাপন বানানো। মাত্রার ‘দীপ্যমান নক্ষত্র সম্মাননা ২০২৫’ আয়োজনে এভাবে ‘মাত্রা’ নিয়ে নিজেদের কথা বললেন অতিথিরা। মাত্রার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্মানিত করা হলো সেসব মানুষকে, যাঁরা শুরু থেকে মাত্রার অসাধারণ সৃজনযাত্রার যাত্রী হয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আলোকি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ‘দীপ্যমান নক্ষত্র সম্মাননা ২০২৫’ শুরু হয় মাত্রার লোগো অ্যানিমেশন প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। শুরুতেই দেখানো হয় মাত্রার তৈরি করা জনপ্রিয় কতগুলো বিজ্ঞাপন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্কৃতিজন আফজাল হোসেন। স্বাগত বক্তব্যে যৌথভাবে ৪০ বছর পথচলার কথা বলেন মাত্রার ম্যানেজিং পার্টনার সানাউল আরেফিন। আশির দশকে এই দুই তরুণের হাত ধরে শুরু হয়েছিল বিজ্ঞাপন সংস্থা ‘মাত্রা’।
১৩ গুণীজনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। বাংলাদেশে রক সংগীতে নতুন ধ্বনি তৈরি করা শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে দেওয়া হয়েছে মরণোত্তর সম্মাননা। তাঁর সম্মাননা গ্রহণ করেন আফজাল হোসেন এবং এলআরবির সদস্য আবদুল্লাহ আল মাসুদ। এই সম্মাননা তুলে দেন স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, আইয়ুব বাচ্চু সব সময় সৃজনশীল থেকেছেন তাঁর কাজে। তিনি অসাধারণ এক সম্পদ। তাঁকে এখনো মানুষ মনে করে।
সম্মাননা পেয়েছেন মডেল আদিল হোসেন নোবেল, সাদিয়া ইসলাম মৌ, তানিয়া আহমেদ, পল্লব চক্রবর্তী ও তানভিন সুইটি। জিঙ্গেলে অনন্য ভূমিকা রাখায় সম্মাননা দেওয়া হয়েছে রিপন খান, ফোয়াদ নাসের বাবু, সুমনা হককে। বিজ্ঞাপনে নেপথ্য কণ্ঠে দিয়ে সম্মাননা পেয়েছেন শিল্পী নিমা রহমান, ত্রপা মজুমদার। রূপ সৃজনে নাহিদ নওরীন জাহান, চিত্রগ্রহণে আনোয়ার হোসেন বুলু পেয়েছেন সম্মাননা।
তাঁদের হাতে সম্মাননা তুলে দিতে মাত্রার ‘দীপ্যমান নক্ষত্র সম্মাননা ২০২৫’ আয়োজনে উপস্থিত হন দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা। নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার, ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী রফিকুন নবী, চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম, অভিনেতা তারিক আনাম খান, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, লেখক ও পর্বতারোহী ইফতেখারুল ইসলাম, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী এবং প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন শিল্পীদের হাতে।
এই গুণীজনেরা বলেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাসে যদি কোনো নামকে আলাদা করে উচ্চারণ করতে হয়, তবে নিঃসন্দেহে সেই নাম ‘মাত্রা’। অনেক মানুষের নিষ্ঠায় যে বিশেষ অর্জন আসে, সে উদাহরণ তৈরি করেছে এই বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
তাঁরা বলেন, বিজ্ঞাপন শুধু পণ্যের প্রচার নয়, মাত্রা তাকে বানিয়েছে বিনোদনের মাধ্যম। মাত্রা বিজ্ঞাপন সংগীত বা জিঙ্গেলকে আলাদা রূপ দিয়েছে। আর তাই মাত্রার বানানো অসংখ্য জিঙ্গেল ঠোঁটে বাজে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
আয়োজনের শেষ দিকে সবাইকে চমকে দিয়ে উপস্থিত হন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, ‘আগের প্রজন্মের কাছ থেকে পরবর্তী প্রজন্ম আচরণ শেখে। আমার সৌভাগ্য আফজাল হোসেনের মতো বড় ভাই ছিল আমাদের।’
আফজাল হোসেন বলেন, এমন এক পরিবেশ ছিল বাংলাদেশে, যেখানে বিজ্ঞাপন তৈরির সময় এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা ভাগ করেনি বরং একে অন্যকে বড় হতে সহযোগিতা করেছে। যেমন বিটপী, এশিয়াটিক ইত্যাদি।
সম্মাননা প্রদান আয়োজনটিকে দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে শিল্পী সানজিদা মাহমুদ ও শুভেন্দু দাস গাইলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের ‘বনে নয় মনে মোর পাখি আজ গান গায়’, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘এমন অনেক কথাই বলো তুমি মন থেকে যা বলো না’র মতো জনপ্রিয় কিছু বাংলা গান।
১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করে এই বিজ্ঞাপনী সংস্থা মাত্রা। চার দশক ধরে এই বিজ্ঞাপনী সংস্থাটি স্টারশিপ, বার্জার রুবিয়ালাক, পেপস জেল, এইচআরসি চায়ের মতো অসংখ্য পণ্যের বিজ্ঞাপন বানিয়ে দেশে আধুনিক বিজ্ঞাপনের সূচনা করেছে।