গণজাগরণ মঞ্চের এক দশক পূর্তি, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের আহ্বান

গণজাগরণ মঞ্চের এক দশক পূর্তিতে গণসংগীত পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী
ছবি: প্রথম আলো

এক দশক পূর্তি হলো গণজাগরণ মঞ্চের। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল কাদের মোল্লার যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। সেই শাহবাগেই গান, কবিতা ও আলোর মিছিল কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের দশকপূর্তি উদ্‌যাপন করেছেন মঞ্চের সংগঠকদের একটি অংশ। যদিও দশকপূর্তিতে শাহবাগে কোনো কর্মসূচি ছিল না মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারপন্থী অংশের।

আজ বিকেল পৌনে পাঁচটায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের দশকপূর্তির অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় সংগীতের পর কয়েক মিনিট ধরে চলে স্লোগান। এরপর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী গণসংগীত পরিবেশন করে। গত এক দশকে প্রয়াত গণজাগরণ মঞ্চে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর একে একে চলতে থাকে গান ও কবিতা আবৃত্তি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল বিভক্তির মুখে পড়ে। সেদিন থেকে শিল্পী কামাল পাশা চৌধুরীর নেতৃত্বে আলাদা হয়ে যায় মঞ্চের একটি অংশ। অন্য পক্ষটি সক্রিয় থাকে ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে। এ নিয়ে শাহবাগে দুই অংশের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘাতও হয়। রোববার গণজাগরণ মঞ্চের দশকপূর্তিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের আহ্বানে ‘গণজাগরণ মঞ্চের ১ দশক’ শীর্ষক কর্মসূচিতে কামাল পাশা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

গণজাগরণ মঞ্চের দশকপূর্তির এই আয়োজনে সবার পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘আমার খুব মনে পড়ে, এক দশক আগে শাহবাগে দিবারাত্রি জেগে জেগে আমরা গান ও আবৃত্তি করেছি, স্লোগান দিয়েছি এবং মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার পতন চেয়েছি। সেটি স্বাধীনতা-উত্তরকালে আমাদের একটি সোনালি সময় বলে মনে হয়। সময়টা আমাদের অনুজ বন্ধু-যুবকদের অবদান। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের পাশে ছিলাম, এটুকুই আমাদের ভূমিকা। ব্লগার বলে আমাদের যে মুক্তির কর্মী ও মুক্তিসংগ্রামীদের হত্যা করা হয়েছে এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গিরা আমাদের যেসব কর্মীকে খুন করেছে, আমার খুব তাঁদের কথা মনে হয়। এই তরুণ ও মুক্তমনের মানুষদের হত্যার কোনো বিচার আমরা এখন পর্যন্ত পেলাম না। এটা আমাদের দুঃখের জায়গা। উদ্বেলিত হওয়ার জায়গা হচ্ছে, আমরা গণজাগরণ মঞ্চকে এখনো ভুলিনি।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনিমেষ রহমান, জীবনানন্দ জয়ন্ত, আকরামুল হক, রবিন আহসান, মারুফ রসূল, লাকী আক্তার, সনাতন উল্লাস, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক খান আসাদুজ্জামান ও এফ এম শাহীন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। গান-কবিতা পর্ব শেষে শাহবাগ থেকে মোমবাতি হাতে আলোর মিছিল বের করা হয়।