উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় ও আদেশ দেওয়া বাড়ছে

  • নব্বইয়ের দশকে হাইকোর্টে প্রথম বাংলায় আদেশ দেওয়া শুরু।

  • গত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হিসেবে এম ইনায়েতুর রহিম বাংলায় আদেশ দেওয়া শুরু করেন।

সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি

দেশের নিম্ন আদালতে বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে একসময় বাংলার প্রচলন খুব একটা ছিল না। তবে এক দশকের ব্যবধানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ইংরেজির পাশাপাশি উচ্চ আদালতে এখন বাংলায় রায়-আদেশের সংখ্যা বাড়ছে। তবে এ পর্যন্ত কত রায় ও আদেশ বাংলায় হয়েছে, সেই তথ্য পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বাংলায় আদেশ ও সিদ্ধান্ত দেওয়া শুরু করেন, যা বিচার বিভাগের ইতিহাসে প্রথম। এরপর থেকে তিনি চেম্বার বিচারপতি হিসেবে বাংলায় আদেশ ও সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। এক যুগের বেশি সময় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি থাকাকালে তিনি বাংলায় প্রায় ৩০ হাজার রায় ও আদেশ দেন।

আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে এখন বেশির ভাগ মামলায় আইনজীবীদের বাংলায় শুনানি ও যুক্তি উপস্থাপন করতে দেখা যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালের এপ্রিলে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন নিয়মিত বাংলায় রায়-আদেশ দিচ্ছেন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মামলায় ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতি রায় দেন। তাঁদের মধ্যে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল বাংলায় রায় লেখেন। এরপর থেকে তিনি বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন।

এবার ভাষার মাসের প্রথম দিনে ভাষাশহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি মামলায় বাংলায় রায় দেন। একই দিন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দুটি মামলায় বাংলায় রায় দেন।

বাংলায় রায়ের পূর্বাপর

অংশীজনেরা বলেন, প্রয়াত বিচারপতি এ আর এম আমীরুল ইসলাম চৌধুরী নব্বইয়ের দশকে হাইকোর্টে বাংলায় আদেশ দেওয়া শুরু করেন। এরপর সাবেক বিচারপতিদের মধ্যে কাজী এবাদুল হক, হামিদুল হক, আবদুল কুদ্দুছ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী বেশ কয়েকটি মামলায় বাংলায় রায় দেন।

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান (প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের (অবসরপ্রাপ্ত) সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৬ সালের ১৫ জুন বাংলায় রায় দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) হত্যা মামলায় হাইকোর্ট বিভাগে থাকাকালে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী (বর্তমানে আপিল বিভাগে) বাংলায় ১৬ হাজার ৫৫২ পৃষ্ঠার রায় লেখেন। বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন হাইকোর্ট বিভাগে থাকাকালে বেশ কয়েকটি মামলায় বাংলায় রায় দেন।

একাধিক অংশীজনের তথ্যমতে, বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্ট বিভাগের বেশ কয়েকজন বিচারপতি বাংলায় রায় ও আদেশ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস, বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম, বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান, বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী, বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান, বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খান, বিচারপতি মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহ।

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ইংরেজিতে রায় হলে বিচারপ্রার্থী কেবল হারলেন না জিতলেন, এটুকুই বুঝতে পারে। কিন্তু বাংলায় হলে কেন হারলেন বা জিতলেন পুরোপুরি বুঝতে পারেন। আশার কথা হচ্ছে, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে এখন বেশির ভাগ মামলায় আইনজীবীদের বাংলায় শুনানি ও যুক্তি উপস্থাপন করেন। উচ্চ আদালতে এখন বাংলায় রায় দেওয়া বাড়ছে। বাংলার ব্যবহার নিয়মিত চর্চা ও অনুশীলনের বিষয়।