শীতের আগমনে বেড়েছে হাঁসের চাহিদা, দাম কেমন এখন
অগ্রহায়ণ মাস প্রায় শেষের দিকে। শীতও নামতে শুরু করেছে। শীত নামতে থাকলে বাজারে হাঁসের মাংসের চাহিদাও বাড়তে শুরু করে। পাশাপাশি চাহিদা বাড়ে হাঁসের ডিমেরও। বাজারে সারা বছর কমবেশি হাঁস ও হাঁসের ডিম বিক্রি হয়। তবে শীতের মৌসুমে বিক্রি বাড়ে কয়েক গুণ।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারা বছরই অল্প পরিমাণে হাঁসের ডিম বিক্রি হয়। হাঁসের বিক্রিও থাকে কম। তবে শীত নামতে শুরু করলে হাঁস ও হাঁসের ডিমের বিক্রি বেড়ে যায়। শুধু বাজারে নয়, ছোট হোটেল থেকে শুরু করে অভিজাত রেস্তোরাঁতেও হাঁসের মাংসের চাহিদা বাড়ে শীতের সময়।
চট্টগ্রামে রিয়াজউদ্দিন বাজার ও পাহাড়তলী বাজারে পাইকারি দরে হাঁসের ডিম ও হাঁস বিক্রি হয়। এ ছাড়া বহদ্দারহাট ও চকবাজার এলাকায় কয়েকটি দোকানে হাঁসের দেখা পাওয়া যায়। এসব বাজারে সারা বছর অল্প পরিমাণে হাঁসের দেখা মেলে। তবে নভেম্বরের শুরু থেকে বাজারে হাঁসের সংখ্যা বাড়ে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই চাহিদা থাকে।
উপজেলা পর্যায়ে খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে হাঁসের উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ। বাজারও বড় হয়েছে। তাঁরা বলছেন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও তথ্য সহায়তা পেলে নতুন উদ্যোক্তারা হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ হবেন।
তথ্য নেই প্রাণিসম্পদ অফিসে
বর্তমানে চট্টগ্রামে হাঁসের বাজার ঠিক কত বড়, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য ব্যবসায়ী বা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় জানাতে পারেনি। হাঁস বা হাঁসের ডিমের উৎপাদন নিয়েও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। কর্মকর্তারা জানান, আলাদাভাবে হাঁসের ডিম বা হাঁস উৎপাদনের তথ্য নেই। হাঁস-মুরগির হিসাব একসঙ্গে করা হয়।
গত পাঁচ বছরে হাঁসের উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ। বাজারও বড় হয়েছে। খামারিরা বলছেন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও তথ্য সহায়তা পেলে নতুন উদ্যোক্তারা হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ হবেন।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, চট্টগ্রামে বিভিন্ন উপজেলায় হাঁসের খামারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভবিষ্যতে এই খাত বড় হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো দিন দিন জলাশয় কমে গেছে। এতে কমেছে হাঁসের প্রাকৃতিক খাদ্য ভান্ডার।
এ ছাড়া উপজেলায় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়গুলো থেকে পর্যাপ্ত প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণ সহায়তা না পাওয়ায় অনেক খামারি হাঁস পালন ছেড়ে দিয়েছেন।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার অভাবেও নতুন উদ্যোক্তারা হাঁস পালনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাই সম্ভাবনা থাকলেও নতুন করে কেউ এ ব্যবসায় আসতে চাচ্ছেন না।
চট্টগ্রাম নগরে প্রক্রিয়াজাত হাঁস ও হাঁসের মাংস সরবরাহ করেন দোহাজারীর খামারি মাসুম বিল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা পর্যায়ে অনেক খামারি গত বছর লোকসান গুনেছেন। এ বছর বন্যায় বড় ক্ষতি হয়েছে। তাই অনেকে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন ছেড়ে দিয়েছেন।
চট্টগ্রামে দেড় কেজির পাতিহাঁস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়। ওজন বাড়লে দাম আরও বাড়ে। তবে কেজি হিসাবে কিনতে গেলে দাম পড়বে প্রতি কেজি ৫০০ টাকার আশপাশে।
হাঁসের একটি খামারের এ স্বত্বাধিকারী আরও বলেন, প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার অভাবেও নতুন উদ্যোক্তারা হাঁস পালনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে সম্ভাবনা থাকলেও নতুন করে কেউ এই ব্যবসায় আসতে চাচ্ছেন না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে আলাদা করে হাঁসের বা হাঁসের ডিমের তথ্য নেই। চট্টগ্রামে বড় আকারের হাঁসের খামার না থাকায় আলাদা করে হিসাব করা হয়নি।
বাজারে দাম এখন যেমন
চট্টগ্রামে বাজারের হাঁসের বড় অংশ পাতিহাঁস। পাতিহাঁসের পাশাপাশি চীনা হাঁসের চাহিদাও আছে। তবে রাজহাঁসের চাহিদা তুলনামূলক কম। চট্টগ্রাম নগরের বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব বাজারে পাতিহাঁসের সংখ্যাই বেশি।
বাজারে প্রতিটি পাতিহাঁস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়। এসব হাঁসের ওজন দেড় কেজির আশপাশে। আকারে বড় হলে দাম আরও কয়েক শ টাকা বাড়ে। চকবাজার এলাকায় কেজি দরে পাতিহাঁসের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
এ ছাড়া দেড় থেকে আড়াই কেজি ওজনের চীনা হাঁসের দাম ১ হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা। তবে কেজি হিসাবে কিনতে গেলে দাম পড়বে প্রতি কেজি ৫০০ টাকার আশপাশে। তবে বাজারভেদে দাম কিছুটা কমবেশি হয়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে হাঁসের ডিমের চাহিদাও তুলনামূলক বেড়েছে। এ ছাড়া চলতি বছরে অন্যান্য মাসের তুলনায় ডিসেম্বর মাসে হাঁসের ডিমের দামও কমেছে। এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত খুচরা পর্যায়ে এক হালি (চারটি) হাঁসের ডিমের দাম গড়ে ৭১ টাকা ছিল।
গত নভেম্বর মাসেও গড়ে ৬৭ টাকার আশপাশে ছিল এক হালি হাঁসের ডিমের দাম। চলতি মাসে প্রথম সপ্তাহে প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। সে হিসাবে প্রতিটি ডিম খুচরায় ১৪ টাকার আশপাশে আর পাইকারি পর্যায়ে ১২ থেকে ১৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।