চট্টগ্রাম বিভাগে বিদ্যুৎ বিপর্যয়, গরমে কাহিল জনজীবন

বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

জাতীয় গ্রিডের চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আজ শনিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে এ বিপর্যয়ের কারণে এই বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে টানা ৪০-৪৫ মিনিট বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে মানুষের ভোগান্তিতে যোগ হয় নতুন মাত্রা।

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের বিষয় নিশ্চিত করেছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীরা। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় শুরু হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ৪ অক্টোবর বেলা ২টা ৫ মিনিটে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় ঘটে। পূর্বাঞ্চলীয় জাতীয় গ্রিডে ওই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে রাজধানীসহ দেশের একটি বড় অংশ টানা চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ ফিরে এলেও কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ আসে ৮ ঘণ্টা পর। এরও আগে ৬ সেপ্টেম্বর একবার গ্রিড বিপর্যয় হয়েছিল। তখন দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা।

তীব্র দাবদাহের মধ্যে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। বিশেষ করে পবিত্র রমজানে ইফতারের আগে এ ঘটনায় তাঁদের ভোগান্তি বাড়ে। আবার ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষও গরমে কাহিল হয়ে পড়েন। হাসপাতালগুলোতে বেগ পেতে হয়েছে চিকিৎসাসেবা দিতে।

পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামে গ্রিড বিপর্যয় ঘটেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।

পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের হাটহাজারী-মদুনাঘাটের ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে কারেন্ট ট্রান্সফরমারের (সিটি) বিস্ফোরণে গ্রিড বিপর্যয় ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অত্যধিক গরমে এ বিস্ফোরণ হয়েছে, প্রাথমিকভাবে এমনটা ধারণা করছেন তাঁরা।

সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় এই প্রকৌশলী জানান, গ্রিড বিপর্যয় সামাল দিয়ে ইফতারের ঠিক আগমুহূর্তে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। আর সাতটার মধ্যে অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ চলে আসে।

তীব্র দাবদাহের মধ্যে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। বিশেষ করে পবিত্র রমজানে ইফতারের আগে এ ঘটনায় তাঁদের ভোগান্তি বাড়ে। আবার ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষও গরমে কাহিল হয়ে পড়েন। হাসপাতালগুলোতে বেগ পেতে হয়েছে চিকিৎসাসেবা দিতে।

বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটলেও চট্টগ্রামে সকাল থেকেই বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছিল। চট্টগ্রামের প্রবর্তক, মেডিকেল, নাসিরাবাদ, চকবাজার, জিইসি মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় বেলা ৩টা ২০ মিনিট থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। একদিকে তীব্র গরম, অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের ত্রাহি অবস্থা। বিদ্যুতের অভাবে বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমেও বিঘ্ন ঘটে।

নগরের পাঁচলাইশ ও প্রবর্তক এলাকা মূলত হাসপাতাল পাড়া। এখানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পাশাপাশি ছোট-বড় অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রের অবস্থান। চমেক হাসপাতাল তাদের ব্যাকআপ জেনারেটর দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। তবে সমস্যায় পড়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রবর্তক এলাকার প্রিমিয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. বেলাল বলেন, বেলা ৩টা ২০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। এ সময় জেনারেটর দিয়ে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চালাতে হয়। দীর্ঘক্ষণ জেনারেটরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করাও কষ্টসাধ্য।

বাড়ছে লোডশেডিং, ক্ষুব্ধ মানুষ

পিডিবির প্রকৌশলীরা বলেন, চট্টগ্রামে এমনিতেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রতিদিন গড়ে ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। সেখানে পাওয়া যায় ৮০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট। এ কারণে লোডশেডিংয়ের ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটল।

চট্টগ্রাম জেলায় বেশ কিছুদিন ধরে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি চলছে। বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। গরম বাড়তে থাকায় লোডশেডিংও বাড়ছে। বাড়ছে বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের কষ্টও।

এ অবস্থায় চট্টগ্রামে গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটলেও প্রথমে সাধারণ মানুষ তা টের পায়নি। তাদের প্রায় সবাই মনে করে, প্রতিদিন যে রকম লোডশেডিং হয়, আজও তেমনটা হচ্ছে। তবে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে।

চট্টগ্রাম নগরের সুগন্ধা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রাশেদ মাহমুদ প্রথম আলো কার্যালয়ে ফোন করে বিদ্যুতের গ্রিড বিপর্যয়ের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, জানতে চান। তাঁর এলাকায় অনেকক্ষণ ধরে বিদ্যুৎ ছিল না। পরিচিতজনদের এলাকায়ও বিদ্যুৎ না থাকার খবর পান তিনি।

গরিবুল্লাহ শাহ হাউজিং এলাকার বাসিন্দা সৈকত দে বলেন, সকাল থেকে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া শুরু হয়। বিকেলের আগে অন্তত ছয়বার গেছে। পরে গণনা করা বাদ দিয়েছেন। বিকেলে একবার যাওয়ার পর আসে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। ১০ মিনিট পর আবার চলে যায়। পুরো দিনটা বরবাদ হয়ে গেছে।

রতন কান্তি দেবাশীষ নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পিডিবি বলছে, সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন, কিন্তু লোডশেডিং ভয়াবহ, নাকি সবই কাগজে-কলমে।

লাভলেন এলাকার একটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে কয়েকবার বিদ্যুৎ গেছে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসে। কিন্তু বিকেল চারটায় বিদ্যুৎ গেছে, আসছে সন্ধ্যা ছয়টায়। জেনারেটর দিয়ে ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় একপর্যায়ে জেনারেটর বন্ধ রাখতে হয়।’