কক্সবাজারে মানুষ ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ে, নিচ্ছেন গরু-ছাগলও

ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে কক্সবাজারের শাহ পরীর দ্বীপ উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন লোকজন
ছবি : সাজিদ হোসেন

প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখার আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন কক্সবাজার সদরের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার মানুষ। পৌরসভার সমিতির পাড়া, পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়া, নাজিরারটেক এলাকা ঘুরে আজ শনিবার দুপুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। সঙ্গে নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। বস্তায়, পলিথিন মুড়িয়ে গৃহস্থালি জিনিসপত্র নিচ্ছেন তাঁরা।

শুধু পরিবার–পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন, তা নয়। ঘরের গৃহপালিত পশুপাখিও সঙ্গে নিচ্ছেন অনেকে। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলছেন তাঁরা।

আজ শনিবার দুপুরে কক্সবাজার পৌরসভার এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মানুষকে নিরাপদে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। এলাকায় টাঙানো হয়েছে বিপৎসংকেতের পতাকা।

এবার ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপকতার খবর জেনে এক দিন আগেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন মানুষ। তাঁরা বলছেন, আগে জীবন বাঁচাতে হবে। শেষ মুহূর্তে ছোটাছুটি করার চেয়ে এক দিন আগে চলে যাওয়া ভালো। তাতে ঝুঁকি কমে।

কক্সবাজার পৌরসভার পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা মো. আবদুল করিম ও তাঁর ভাই আবদুর রহমান টমটমে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঘরের তিনটি ছাগল। তিনি বলেন, মা-বাবাসহ তাঁরা সবাই নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন। ঘরের গরু-ছাগল কেন এখানে পড়ে থাকবে। তাঁদের ১০টি ছাগল ও ১টি গরু আছে। সবই আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন।

সমুদ্র উপকূলের কাছে হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে রয়েছে সমিতি পাড়া, নাজিরারটেক, পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়া।

সমিতি পাড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ মোহছেনা বেগম চার সন্তানকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর কাছে তেমন জিনিসপত্র ছিল না। তিনি বলেন, সবাই বলাবলি করছেন, এবার বড় ঝড় হবে। তাই নিরাপদে থাকতে সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। আগে জীবন, তারপর জিনিসপত্র।

পৌরসভার নাজিরার টেকের অবস্থান একেবারে সাগড়পাড়ে। এই এলাকায় মানুষের ঘনবসতি। এখানে রয়েছে শুঁটকিপল্লি।

ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে কক্সবাজারের শাহ পরীর দ্বীপ উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন লোকজন
ছবি : সাজিদ হোসেন

আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, পাড়ায় পাড়ায় চলছে মানুষের ঘর ছাড়ার প্রস্তুতি। আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে জড়ো হচ্ছেন পাড়ার মোড়ে। সঙ্গে আছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। টমটম এলেই ভাড়া করতে হুড়োহুড়ি পড়ে যাচ্ছে। দরদাম নিয়ে হিসাব করার সময় নেই। গাড়িতে মালামাল তুলে রওনা হচ্ছেন নিরাপদ ঠিকানার খোঁজে।

নাজিরারটেকের মুশতাকপাড়ার বৃদ্ধা খালেদা আক্তার বলেন, এখানেই তাঁর ঘরবাড়ি। কক্সবাজার শহরে আত্মীয়স্বজন নেই। তাই সরকারের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। ঘর ছেড়ে যেতে চান না। আবার না গেলেও হবে না। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ভয় এখনো মনে পড়ে।

নাজিরারটেকের অনেকের পেশা মাছ ধরা। সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় এবার সবাই তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছেন। এখন ঘরের মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার তোড়জোড় করছেন। এমন একজন মো. সাগর। তিনি বলেন, একেকবার সাগরে গেলে ১০-১২ দিন থাকেন। এবার সাত দিনের মাথায় চলে এসেছেন। সাগর গরম। এখন বাড়িতেও থাকা যাবে না। তাই স্ত্রী, বাচ্চা, মা-বাবাকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাচ্ছেন। তবে ঘরের তেমন কোনো জিনিসপত্র নিচ্ছেন না।

সাগরের মতো একই পেশায় থাকলেও এলাকা ছাড়তে রাজি নন মো. খোরশেদ। তিনি বলেন, ‘মরলে এখানে মরব। বাঁচলে এখানে বাঁচব। সবাই চলে গেলে ঘরের জিনিসপত্র দেখবে কে? তাঁর মাছ ধরার জাল আছে। ঘরে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র আছে।’

নিরাপদ আশ্রয়ে যেমন ছুটছেন মানুষ, তেমনি শুঁটকিপল্লির শুঁটকি, মাছ, লবণ সরিয়ে নিচ্ছেন মালিকেরা। ট্রাকে করে এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এই কাজে শ্রমিকদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।

নাজিরারটেক পাড়া থেকে ফেরার সময় দেখা যায়, জেলেরা মাছ ধরার নৌকা নিরাপদে কুতুবদিয়া পাড়ায় সরিয়ে রেখেছেন। সেখানে গল্পগুজবে মেতে ছিলেন জেলেরা।

মাছ ধরার নৌকার মালিক মো. হোসেন ও আমজাদ হোসেন বলেন, আগে পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাবেন। ঝড়ের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা থাকলে এখান থেকে নৌকাও সরিয়ে নেবেন। কারণ, নৌকা ভেসে গেলে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।