১৫ অভিযোগ এনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্যের নামে ‘উড়ো চিঠি’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলামের নামে বিভিন্ন অভিযোগসংবলিত একটি ‘উড়ো চিঠি’ নিয়ে ক্যাম্পাসে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। চিঠিতে সহ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে ১৫টি অভিযোগ করা হয়।

চিঠিটির বিষয়ে সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে উড়ো চিঠির বিষয়টি জানতে পেরেছি। নাম, ঠিকানাবিহীন এসব উড়ো চিঠির কোনো ভিত্তি নেই।’ তবে যাঁরা এসব করছেন, তাঁদের সৎ সাহস থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে তথ্য–প্রমাণ নিয়ে সরাসরি এসে অভিযোগ করতে বলেছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে ১ হাজার ৪০০ কেজি তামা ব্যবহারের কথা থাকলেও মাত্র ৪৯২ কেজি তামা ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি তামা খেয়ে ফেলে এবং মূল নকশায় বঙ্গবন্ধুর কোনো ম্যুরাল যুক্তের কথা না থাকলেও ইচ্ছাকৃতভাবে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি বিতর্কিত জায়গায় স্থাপন করেন।

ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার পরও সুলতান–উল–ইসলামের বিরুদ্ধে কৌশলে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বিভাগ ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যায় ভর্তি করানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া চিঠিতে বলা হয়েছে, সহ–উপাচার্য তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিতে নিজ বিভাগের শিক্ষক বানিয়ে দেওয়ার জন্য একজনের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

উড়ো চিঠিতে বলা হয়েছে, সহ–উপাচার্যের ছেলের বান্ধবীকে চাকরি দেওয়ার জন্য ফলাফল পরিবর্তন করাচ্ছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান না মেনে যেখানে–সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান না মেনে বিনা দরপত্রে যত্রতত্র স্থাপনা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ করেছেন অধ্যাপক সুলতান–উল–ইসলাম। এর মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন নির্মাণের জন্য ১১ কোটি টাকার অনিয়মসহ বিনা টেন্ডারে খেলাধুলা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিভাগে মালামাল ক্রয়ের অভিযোগ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, কর্মকর্তা পদে অ্যাডহক নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে একটি ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কার্যালয়ে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, কয়েকটি বিভাগের সভাপতি ও নিজের অনুসারী কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে আলোচনায় বসেন অধ্যাপক সুলতান। এই সভায় ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ৫০ জনকে কর্মকর্তা পদে অ্যাডহক নিয়োগ, ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে মাস্টাররোলের ৮০ জন কর্মচারীর চাকরি স্থায়ীকরণ, শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের (২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা) ভাগ–বাঁটোয়ারার বিষয়ে উপাচার্যকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এই সময় একাডেমিক ভবনে সবার প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে প্রহরীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভেতরে শিক্ষক নিয়োগের মিটিং চলছে, প্রবেশ করা যাবে না।

এ ছাড়া ক্যালেন্ডার ছাপানোতে ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা অপচয় করেছেন উল্লেখ করে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জুলাই মাসে সহ-উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এরপর উপাচার্য হিসেবে নিজ নাম উল্লেখ করে ক্যালেন্ডার ছাপানোর জন্য ক্যালেন্ডার ছাপানো কমিটি গঠন করেন এবং ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেন। এর কিছুদিন পর সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারকে নিয়োগ দিলে সুলতান–উল–ইসলাম এই ক্যালেন্ডার বিতরণ করতে পারেননি। নতুন করে আবার ক্যালেন্ডার প্রকাশিত হয়। ফলে ক্যালেন্ডার ছাপানো বাবদ রাবির প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা অপচয় হয়।

এ ছাড়া ২০২১ সালের ২০ জুন কোনো ধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামে ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ঢোকানো হয়। সহ-উপাচার্য সুলতান–উল–ইসলাম চার সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির প্রধান ছিলেন।

উড়ো চিঠির এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘নাম, ঠিকানাবিহীন এসব উড়ো চিঠির কোনো ভিত্তি নেই। সৎ সাহস থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তথ্য–প্রমাণ নিয়ে সরাসরি এসে অভিযোগ করুক। যারা যে উদ্দেশ্যে নিয়ে এসব করছে, তা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। আমি আমার নীতি ও আদর্শের জায়গায় সব সময় অটল থেকেছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।’

প্রায় একই কথা বললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। তিনি বলেন, কোনো অভিযোগ থাকলে সরাসরি এসে বলুক এ রকম উড়ো চিঠি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের জন্য লজ্জাজনক।