শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা, লুটপাট, উপাসনালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মীসহ ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এসব সহিংসতার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জনমনে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দূর করতে পদক্ষেপ জোরদার করার আহ্বানও জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ বুধবার এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করলে ঢাকাসহ সারা দেশের লাখো মানুষ রাজপথে উল্লাস করেন। এত ব্যাপক হতাহতের দায় নিয়ে তাঁর পদত্যাগের দাবি পূরণ হওয়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী-জনতা একে ঐতিহাসিক বিজয় হিসেবে দেখছেন। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের সামনে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। কিন্তু একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী মানুষ ও দুষ্কৃতকারী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই পরিস্থিতির শূন্যতাকে কাজে লাগিয়ে লুটপাট চালাচ্ছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিষ্টান, আহমদিয়া সম্প্রদায় ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষের বাড়িঘরে হামলা করছে, অগ্নিসংযোগ ও শারীরিক নির্যাতনে লিপ্ত হয়েছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সব জেলার মানুষ যেকোনো সময় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন। এ অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
পুলিশের অনেক সদস্য নানা অন্যায়-অনাচার করেছেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশেষত আন্দোলনের সময় তাদের অনেককে হত্যাকারী ও নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা গেছে। তাই এসব হামলার সঙ্গে হয়তো সাধারণ ভুক্তভোগী মানুষের ক্ষোভ যুক্ত থাকতে পারে। তবে সেটাই একমাত্র কারণ নয়। সদ্য ক্ষমতাহারা ‘হেলমেট বাহিনী’র লোকজন এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতকারী মহল যারা এ দেশকে পুরোপুরি আইনশৃঙ্খলাবিহীন জনপদে পরিণত করতে চায় এই আক্রমণ, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলোতে তাদের ইন্ধন রয়েছে বলে আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ আছে।
রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান ও সেনাসদস্যদের কাছে ছয়টি দাবি তুলে ধরা হয় বিবৃতিতে। এর মধ্যে রয়েছে যেকোনো ধরনের অরাজকতা, সহিংসতা, হামলা, লুটতরাজের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাসহ দেশব্যাপী সব জেলা ও উপজেলায় সেনা মোতায়েন করা। সংখ্যালঘু মানুষের বাড়িঘর, দোকানপাট, স্থাপনা, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ের সুরক্ষা দেওয়া। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারীদের অসম্মান করার সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্য নেতাদের তাঁদের বক্তব্যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা প্রতিরোধ ও তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জনসম্পদ সুরক্ষার বিষয়টি প্রতিনিয়ত বলতে হবে। পাশাপাশি কার্যকর সুরক্ষায় তাঁদের স্বেচ্ছাসেবা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এসব ব্যাপারে গণমাধ্যমের সোচ্চার ভূমিকা জোরদার করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর যেকোনো প্রচেষ্টাকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।
বিবৃতিদাতারা হলেন সুলতানা কামাল, হামিদা হোসেন, খুশী কবির, রাশেদা কে চৌধূরী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জেড আই খান পান্না, সেলিম সামাদ, শাহনাজ হুদা, শিরীন হক, কাজল দেবনাথ, তবারক হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, সুমাইয়া খায়ের, ফস্টিনা পেরেইরা, শামসুল হুদা, মনীন্দ্র কুমার নাথ, সারা হোসেন, রেজাউল করিম চৌধুরী, মাকসুদুল হক, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, বীনা ডি কস্তা, সালেহ আহমেদ, সাইদুর রহমান, ফারহা তানজিম, রেজওয়ানা করিম, নাসের বখতিয়ার, হানা শামস আহমেদ, দীপায়ন খীসা ও মুক্তাশ্রী চাকমা।