জনতার সরকার
নতুন সাইট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে
সরকারের উন্নয়নকাজসহ নানা কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মানুষের মতামত জানতে নতুন পোর্টাল করা হচ্ছে।
প্রথমে সরকারের ১১টি বিভাগ ও মন্ত্রণালয় নিয়ে চালু হবে।
১৫ সেপ্টেম্বর নতুন সাইটের উদ্বোধন।
নাগরিকদের তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বিশেষজ্ঞদের।
সরকারি কাজে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে ও তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে ‘জনতার সরকার’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম করছে সরকার। এখানে সরকারের বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে মানুষ মতামত জানাতে পারবেন। তবে কোন কোন বিষয়ে মতামত জানানো যাবে, তা সরকারই ঠিক করবে।
প্রশ্ন উঠেছে, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ ও সেবাদানের আরও প্ল্যাটফর্ম থাকতে নতুন করে কেন একটি সাইট করতে হচ্ছে। এ ছাড়া এই প্ল্যাটফর্মে নাগরিকের যে তথ্য যাচ্ছে, তার সুরক্ষা কতটা থাকবে। অবশ্য নাগরিকের কোনো ঝুঁকি থাকবে না বলে কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করছে।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ‘বাংলাদেশ সরকারের জন্য নিরাপদ ই-মেইল ও ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ‘জনতার সরকার’ ওয়েব পোর্টালটি তৈরি হচ্ছে।
এই প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হচ্ছে, সরকার ও জনগণের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন। এর মাধ্যমে নাগরিকেরা সরকারের উন্নয়নকাজের বিষয়ে তাঁদের মতামত ও চিন্তাভাবনা জানাতে পারবেন। সরকারও জনগণের বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি জেনে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কর্তৃপক্ষ এটিকে নাগরিক ও সরকারের মধ্যে ডিজিটাল সেতু বলতে চাইছে। পোর্টালটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীবান্ধব করা হবে।
পোর্টালে মতামত বা অভিযোগ জানাতে অথবা জরিপে অংশ নিতে হলে ফেসবুক, ই-মেইল বা মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে লগইন করতে হবে। জরিপের ফলাফল ও মতামত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা থাকবে। কেউ নাম প্রকাশ না করে জানাতে চাইলে সে ব্যবস্থা থাকবে। কেউ কোনো অভিযোগ বা মতামত সরাসরি কোনো কর্তৃপক্ষকে জানাতে চাইলে তা–ও করা যাবে। সাইটে আসা মতামত বা প্রতিক্রিয়া মডারেট (পরিমিত ভাষা) করে প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কটুক্তি তো প্রকাশ করা যায় না। গঠনমূলক সমালোচনা হলে প্রকাশ করা হবে।’ তিনি বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিও বার্তা দেবেন। সাইটে আলোচনার বিষয় কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেবে। এর ওপর নাগরিকেরা মতামত জানাতে পারবেন। তবে উন্মুক্ত আলোচনার সুযোগও রাখা হবে।
জানা গেছে, ১৫ সেপ্টেম্বর পোর্টালটির উদ্বোধন করা হবে। এই প্ল্যাটফর্মের জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। এটি প্রথমে সরকারের ১১টি বিভাগ ও মন্ত্রণালয় নিয়ে চালু হবে। ছয় মাস পর সব বিভাগ ও মন্ত্রণালয় এর আওতায় আসবে।
প্রকল্প পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, ২০২৩ সালে ‘জনতার সরকার’ প্ল্যাটফর্মটি ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছেন, এজেন্সি নয়, পোর্টালটি ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টারের অধীনে থাকবে।
প্রায় অনুরূপ থাকার পরও নতুন সাইট
সরকারের প্রতিটি সংস্থার ওয়েবসাইট ও অনেকের ফেসবুক পেজ আছে। এ ছাড়া সব সরকারি সেবা পেতে মাইগভ নামের একটি পোর্টাল আছে। ‘৩৩৩ কল সেন্টার’–এর ওয়েবসাইটেও বলা আছে, সেখানে সেবাপ্রাপ্তির তথ্য, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সামাজিক সমস্যা প্রতিকারে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানানো যাবে।
ডিজিটাল জগতে মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মো. সাইমুম রেজা তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনগণের মতামত ও পরামর্শ শুনতে এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। প্রশ্ন হলো, এটি কেন করা হচ্ছে?
এই শিক্ষক বলেন, মানুষের কী কী ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়া হবে এবং তথ্যের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে। কোন নীতিমালার আলোকে মন্তব্য মডারেট করা হবে? এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে জনগণের তথ্য লাভের অধিকারকে খর্ব করবে।
নতুন প্ল্যাটফর্ম প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরা ও সেখানে জনগণের মতামত জানতে ‘জনতার সরকার’ প্ল্যাটফর্ম।
কমেন্ট মডারেট প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উসকানিমূলক ও অবমাননাকর বক্তব্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে—এমন বক্তব্য যাচাই-বাছাই করতে কিউরেটর থাকবে।
বিবেচনায় দুই দেশের সাইট
প্রকল্প পরিচালক বলেন, জনতার সরকার করার ক্ষেত্রে ভারতের মাইগভ ডট ইন ও মালয়েশিয়া ডট গভ ডট এমওয়াই সাইট বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ও বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বলেন, সাইটটির কার্যকারিতা থাকবে কি না এবং জনগণ এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে কি না, সেটি দেখতে হবে।
কারণ, কোনো কিছু নিয়ে অভিযোগ জানালে বা সমালোচনা করলে অনেকে হেনস্তার শিকার হন। এটি সরকারের সাইট এবং এখানে প্রতিক্রিয়াদাতাদের মুঠোফোন নম্বর, ফেসবুক অথবা ই–মেইল আইডি সরকারের কাছেই যাচ্ছে।