ভোগ বিজনেস ১০০ উদ্ভাবকের তালিকায় বাংলাদেশের মুস্তাফিজ উদ্দিন ও তৌহিদা শিরোপা

ভোগ সাময়িকীর বিজনেস ১০০ তালিকায় স্থান পাওয়া মুস্তাফিজ উদ্দিন ও তৌহিদা শিরোপা

ফ্যাশন ও জীবনযাপনবিষয়ক বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ভোগ বিশ্বের ১০০ উদ্ভাবনী উদ্যোগের তালিকা প্রকাশ করেছে। আজ সোমবার প্রকাশিত ‘ভোগ বিজনেস ইনোভেটরস: ক্লাস অব ২০২৩’ শিরোনামের এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের মুস্তাফিজ উদ্দিন ও তৌহিদা শিরোপা।

ভোগ সাময়িকীর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত সংস্করণগুলোর সম্পাদকেরা মিলে প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করা উদ্ভাবনী উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে এই শীর্ষ ১০০ তালিকা করে থাকেন। ভোগের ব্যবসা-বাণিজ্য বিভাগের সম্পাদকীয় কর্মীরা প্রাথমিক বাছাই করে থাকেন। এ বছর মোট পাঁচটি শ্রেণিতে এই ১০০ উদ্ভাবককে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে তালিকার শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রেণিগুলো হলে প্রযুক্তি ও ওয়েবথ্রি ইনোভেটরস; সাসটেইনেবিলিটি থট লিডারস; পরবর্তী প্রজন্মের উদ্যোক্তা ও অধিকারকর্মী; বিউটি ডিসরাপটরস এবং পরিবর্তনের চ্যাম্পিয়ন।

মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মনের বন্ধুর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তৌহিদা শিরোপা এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মুস্তাফিজ উদ্দিন—দুজনই সাসটেইনেবিলিটি থট লিডারস শ্রেণিতে ১০০ উদ্ভাবকের তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

‘ভোগ বিজনেস ১০০ ইনোভেটরস’ তালিকায় স্থান পাওয়ার পর মুস্তাফিজ উদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজের স্বীকৃতি পাওয়া সব সময়ই আনন্দের। আমি সব সময়ই টেকসই ফ্যাশনের জন্য কাজ করে যাই। ভোগ বিভিন্নজনের কাজ দেখে এই তালিকা করেছে।’

তৌহিদা শিরোপা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম বৈশ্বিক তালিকায় মনের বন্ধুর তথা বাংলাদেশের নাম আসা খুবই আনন্দের ব্যাপার। এটা সামষ্টিক কাজের স্বীকৃতি। ভবিষ্যতে আরও বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করে মনের বন্ধু তার কাজের পরিধি বাড়িয়ে নিতে চায়।’

তৌহিদা শিরোপা
সংগৃহীত

তৌহিদা শিরোপার কাজ সম্পর্কে ভোগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁর প্রতিষ্ঠিত মনের বন্ধু তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের স্বল্প খরচের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি নারী ও বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্যও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয় মনের বন্ধু। এই সেবা দেওয়া হয় কাউন্সেলিং, কর্মশালার মাধ্যমে। ভোগের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মনের বন্ধু যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও ভালো থাকার উপায় বলে দেয়, তার খরচ প্রতিবার মাত্র দশমিক ২৭ থেকে ৯৪ সেন্ট, অর্থাৎ এক ডলারের কম খরচে মনের বন্ধু এই সেবা দিয়ে থাকে।

২০১৬ সালে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ২ লাখ ১০ হাজার মানুষকে দলভিত্তিক সেবা দিয়েছে। ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা দুই কোটি পোশাকশ্রমিককে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। গত এপ্রিলে মনের বন্ধু বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড টমি হিলফিগারের ফ্যাশন ফ্রন্টিয়ার চ্যালেঞ্জ পুরস্কার হিসেবে এক লাখ ইউরো বিনিয়োগ পেয়েছে। ইউএন উইমেন ডব্লিউইপিএস পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন তৌহিদা শিরোপা।

মুস্তাফিজ উদ্দিন
সংগৃহীত

মুস্তাফিজ উদ্দিন রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে টেকসই ফ্যাশন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। ভোগ বিজনেসের প্রতিবেদনে তাঁর সম্পর্কে লেখা হয়েছে, করোনা মহামারির সময় যখন সরবরাহকারীদের একের পর এক অর্ডার বাতিল হচ্ছিল, তখন তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মুস্তাফিজ উদ্দিন। তিনি সরবরাহকারীদের জানিয়েছিলেন, কী ঘটছে আর কী হতে পারে। এ রকম প্রথম নয়, মুস্তাফিজ দীর্ঘদিন ধরে সংবাদমাধ্যমে মতামত, নিবন্ধ লিখে যাচ্ছেন, তৈরি পোশাকশিল্পের পক্ষে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজটি করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে আন্তর্জাতিকতায় তুলে ধরতে মুস্তাফিজের অবদান অনেকটাই। তিনি বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর আয়োজক। সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম নামে টেকসই ফ্যাশন নিয়ে একটি আয়োজন করেন। চলতি বছর শুরু করেছেন বেস্ট অব বাংলাদেশ প্রদর্শনী। গত সপ্তাহেই আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ আয়োজন। এতে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক কোম্পানিগুলো ইউরোপের বাজারে নিজেদের ফ্যাশন পণ্য তুলে ধরতে পেরছেন।

তরুণ উদ্যোক্তা মুস্তাফিজ উদ্দিন ড্রেপারস সাসটেইনেবল ফ্যাশন পুরস্কার পেয়েছেন ২০২১ সালে। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পুরস্কার।