প্রথম আলো–ডেইলি স্টার–ছায়ানটে হামলায় স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান

প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট কার্যালয়সহ অন্যান্য সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যমকর্মী এবং শিল্পীদের ওপর হামলার ঘটনায় দ্রুত স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ছয়টি মানবাধিকার ও সাংবাদিক সংগঠন। সেই সঙ্গে এসব ঘটনায় জড়িত সব অপরাধী, পরিকল্পনাকারী ও উসকানিদাতাদের যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিও তোলা হয়েছে।

‘বাংলাদেশে বাক্‌স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের ওপর আঘাতের’ প্রতিবাদে আজ সোমবার ছয়টি সংগঠনের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতি আসে। সংগঠনগুলো হলো—এক্সেস নাউ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (আইটিজেপি), জার্নালিস্ট ফর ডেমোক্রেসি ইন শ্রীলঙ্কা (জেডিএস) এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই)।

১৮ ডিসেম্বর রাতে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার এবং ছায়ানটে হামলা–ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, স্পষ্টতই এসব সমন্বিত সহিংসতার ঘটনাগুলো বাংলাদেশের স্বাধীন সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী আর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ওপর আঘাত জোরদার হওয়ার বিষয়টি মেলে ধরে।

সেই সঙ্গে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা এবং পুড়িয়ে মারার ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশি–বিদেশি মানবাধিকার ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের কথাও উল্লেখ করে তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, রাজনীতিবিদ, অধিকারকর্মী, শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা, বিশেষত ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে যখন রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সময়ে আইনের শাসনের অবক্ষয় এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক আলোচনা ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের জায়গাগুলো সংকুচিত হয়ে আসা গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

সরকারের সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এসব ঘটনা এটাই স্পষ্ট করে যে পুনরাবৃত্তিমূলক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে ছড়ানো ঘৃণা ও উসকানির বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর সাড়া দিতে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা রয়েছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার দেশে সাইবার আইন সংস্কারের বিষয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে। তবে প্রস্তাবগুলো নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর কাছ থেকে সমালোচিত হয়েছে।’

এ পরিস্থিতিতে ছয়টি সংগঠনের পক্ষ থেকে সারা দেশে সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম, সংবাদমাধ্যমের কর্মী, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের কর্মীদের জন্য তাৎক্ষণিক ও কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, যেখানে বিশ্বাসযোগ্য হুমকি বিদ্যমান সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থার বন্দোবস্ত করুন

বিবৃতিতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও সহিংসতার প্ররোচনার বিরুদ্ধে সক্রিয় আর সময়োপযোগী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার জন্য প্রযুক্তি কোম্পানি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গেও একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।

আরও পড়ুন

প্রথম আলো–ডেইলি স্টার ও দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলায় শনাক্ত ৩১, গ্রেপ্তার ৯সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা, ভয় দেখানো ও হয়রানির প্রকাশ্য ও দ্ব্যর্থহীন নিন্দা জানানো এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক জীবন রক্ষায় রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশি–বিদেশি ছয়টি সংগঠন

আরও পড়ুন