সাংবাদিক আনিস আলমগীর গ্রেপ্তার

সাংবাদিক আনিস আলমগীরফাইল ছবি

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

মামলাটি হয়েছে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায়। এই মামলায় আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আজ সোমবার বেলা ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন ডিএমপির ডিবি প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম।

শফিকুল ইসলাম বলেন, এই মামলায় আনিস আলমগীরসহ আসামি পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল রোববার রাতে আনিস আলমগীরকে ডিএমপির ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। এ বিষয়ে আনিস আলমগীর গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তিনি ডিবি কার্যালয়ে আছেন। তাঁকে ধানমন্ডি এলাকার একটি জিম (ব্যায়ামাগার) থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নিয়ে আসা হয়। আটটার দিকে ডিবি কার্যালয়ে পৌঁছান। তাঁকে বলা হয়, ডিবি প্রধান তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন।

আজ সোমবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আনিস আলমগীরের ডিবি কার্যালয়ে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ডিএমপির ডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, আনিস আলমগীর কার্যালয়ে রয়েছেন। তাঁর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

গতকাল রাতে সাংবাদিক আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়। জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ এই অভিযোগ দেন। অভিযোগে অন্য যে দুজনের নাম ছিল, তাঁরা হলেন মডেল মারিয়া কিশপট্ট ও ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ।

অভিযোগটি আজ সকাল পর্যন্ত মামলা হিসেবে থানায় নথিভুক্ত হয়নি। এ বিষয়ে সকালে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোহাম্মদ রফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এখন ডিএমপির ডিবি জানাল, রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনিস আলমগীর দৈনিক আজকের কাগজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে টেলিভিশন টক শোতে নানা বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন

আসকের নিন্দা, উদ্বেগ 

সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার দেখানোর ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে।

আসক মনে করে, একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করা হয়েছে, যা স্পষ্টতই আইনটির উদ্দেশ্য ও পরিধির অপপ্রয়োগের শামিল। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনের জন্য প্রণীত একটি কঠোর আইনকে মতপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার ওপর প্রয়োগ করা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক নীতির পরিপন্থী এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।

আসক আরও মনে করে, সরকার বা রাষ্ট্রীয় নীতির সমালোচনা করা কোনো অপরাধ নয়। বরং স্বাধীন ও সমালোচনামূলক সাংবাদিকতা জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থার অপরিহার্য উপাদান। এ ধরনের গ্রেপ্তার গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে এবং ভিন্নমত দমনের একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

অবিলম্বে সাংবাদিক আনিস আলমগীরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে ভিন্নমত ও সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে এ ধরনের আইনের অপব্যবহার বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আসক।