বায়ুদূষণ: অবকাঠামো উন্নয়নকাজ দিনের বদলে রাতে করার দাবি

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি-মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার বাপা আয়োজিত ‘বাজেটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু খাত: বরাদ্দ বিশ্লেষণ ও আগামীর পথনকশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা
ছবি: সংগৃহীত

উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণের সময় ধুলোবালুর কারণে বায়ুদূষণ বাড়ছে। এতেÿক্ষতিগ্রস্ত হয় নগরবাসী ও গাছপালা। নগরবাসীকে ধুলাবালু থেকে রক্ষায় এ ধরনের কাজ দিনের পরিবর্তে রাতে করার পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নেতারা বলেছেন, গাছগুলো সকালেই ধুয়ে দিলে পাতার ওপর পড়ে থাকা ধুলার সমস্যার সমাধান সম্ভব।

নেতারা বলেন, নগরাঞ্চলে পথেঘাটে পড়ে থাকা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। এ কাজে প্রবীণ (অবসরপ্রাপ্ত) নাগরিকদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত করে সুফল পাচ্ছে জাপান। বাংলাদেশে এ কাজে তরুণ শিক্ষার্থীদেরও যুক্ত করা যেতে পারে। তাদের জন্য বিশেষ একটি প্রণোদনার ব্যবস্থা বাজেটে থাকতে পারে।

বাপা আয়োজিত ‘বাজেটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু খাত: বরাদ্দ বিশ্লেষণ ও আগামীর পথনকশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলা হয়েছে। সভায় বাজেটের একটি বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে বাপার পক্ষ থেকে আগামী বাজেটের জন্য ১৭ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি-মিলনায়তনে আয়োজিত এই সভায় বাপার নেতারাসহ দেশের পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

সভায় সুপারিশ হিসেবে নগরে বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদকদের পর্যাপ্ত প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে উচ্চ হারে কর আরোপের বিধান করার সুপারিশ করে উৎপাদককেই বর্জ্য আহরণের প্রক্রিয়ায় আগ্রহী করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বাপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং বাপার নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সহসভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। এতে সূচনা বক্তব্য দেন বাপার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।
মূল প্রবন্ধে আতিউর রহমান বলেন, ‘যখন শেষ গাছটি মারা যাবে এবং শেষ নদীটি বিষাক্ত হয়ে যাবে এবং শেষ মাছটিও ধরা পড়বে, তখনই আমরা বুঝতে পারব যে আমরা টাকা খেতে পারি না।’

পরিবেশ ও জলবায়ুসংশ্লিষ্ট খাতে এবারের বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটের চেয়ে এই বরাদ্দ শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ কম। বাপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, পরিবেশ খাতে বরাদ্দ পরিমাণে বাড়লেও মোট বাজেটের শতকরা হারে কমে যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম বিদেশি পরামর্শকনির্ভর প্রকল্প কমানোর দাবি করেন। তিনি বলেন, যেভাবে দেশের নদীগুলো থেকে বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৫০ বছরে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।

সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্কের (বেন) বৈশ্বিক সমন্বয়কারী অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান বলেন, দেশের হাওর অঞ্চলের জলাভূমির ৮৭ শতাংশ ধ্বংস হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র ইটভাটা তৈরি হচ্ছে। সরকার এগুলোর বিষয়ে আরও দায়িত্বশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, প্রতিবছরই উন্নয়নের নামে দেশের ৬৯ হাজার হেক্টর জমি নষ্ট করা হচ্ছে। দেশের পরিবেশের স্বার্থে বাপার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে সরকার কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার বাজেট পাসের আগেই বাপার পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে প্রস্তাবগুলো নিয়ে বসার আহ্বান জানান।