মানিকগঞ্জ সদরের কৈতরা গ্রামের একটি হ্যাচারিতে মো. রুবেল হত্যা মামলার নথি তলবের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন বাদী ও আসামি।
আজ রোববার সকালে বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে ওই আবেদন করার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়। পরে আবেদনটি আদালতে জমা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আবেদনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’ শিরোনামে ২ মার্চ প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে আসামি সোহেল ওরফে নুরুন্নবী ও বাদী চম্পা আক্তার ওরফে অঞ্জনা আবেদনটি করেছেন। সোহেল ও চম্পা সম্পর্কে ভাইবোন। আর নিহত রুবেল সোহেলের ভগ্নিপতি।
আবেদনের প্রার্থনা অনুযায়ী, মানিকগঞ্জ সদর থানায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর করা ওই মামলার কার্যধারার সঠিকতা বা বৈধতা নির্ণয়ে নথি তলব করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তা বিচারাধীন অবস্থায় মামলাটির নথি পাঠাতে মানিকগঞ্জের দায়রা জজ আদালতের প্রতি নির্দেশ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রুল বিচারাধীন অবস্থায় অভিযুক্ত আবেদনকারী সোহেলের জামিনের আরজিও রয়েছে এতে।
আইনজীবী শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ২৩ সেপ্টেম্বর ওই হত্যার ঘটনার পর মামলা দায়েরের ২৩ ঘণ্টার মধ্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, সুরতহাল প্রতিবেদন, স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি ও ১৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। যে কারণে মামলার কার্যধারার সঠিকতা বা বৈধতা নির্নয়ে নথি তলবের নির্দেশনা চেয়ে আসামি ও বাদী আবেদনটি করেছেন। আদালতের কার্যতালিকার ক্রম অনুসারে আবেদনের ওপর শুনানি হবে।’
প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মরদেহ রাত দেড়টায় উদ্ধারের পর সুরতহাল করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠানো হয় হাসপাতালে।
এরপর মামলা, আসামি গ্রেপ্তার, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মানচিত্র তৈরি, সাক্ষ্য গ্রহণসহ একে একে অন্তত ৯টি ধাপ পেরিয়ে হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হয় মাত্র ২২ ঘণ্টায়। পরবর্তী ২০ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়সহ তদন্তের সব প্রক্রিয়া শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অর্থাৎ, মরদেহ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র জমা দিতে পুলিশের সময় লেগেছে মাত্র ৪২ ঘণ্টা। একটি খুনের মামলার তদন্তে এটি এক ব্যতিক্রমী ঘটনা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুই দিনের কম সময়ে খুনের মামলার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ঘটনায় অনেকে প্রশংসা করলেও প্রশ্ন তুলেছেন আইন ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, মামলাটির তদন্ত শেষ হয়েছে রকেটের চেয়েও দ্রুতগতিতে। এটা ব্যতিক্রমী ও আশ্চর্যজনক ঘটনা। পুলিশের এমন তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরাও।
২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে মানিকগঞ্জ সদরের কৈতরা গ্রামের একটি হ্যাচারিতে খুন হন মো. রুবেল (২২)। পরদিন তাঁর স্ত্রী বাদী হয়ে সোহেলকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।
পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে রুবেল খুন হন। ৪০ মিনিট পর সোহেল ওরফে নুরনবী (৩০) নামের এক তরুণ থানায় গিয়ে নিজে রুবেলকে খুন করেছেন বলে দাবি করেন। পুলিশ সোহেলকে নিয়ে মানিকগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। সেখান থেকে একটি রামদা উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রাত ১টা ৫০ মিনিটের দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। তখন দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নেয় পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন, তথ্য সংগ্রহ, ঘটনাস্থলের মানচিত্র তৈরি করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে রুবেলের স্ত্রী চম্পা আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। পরে ওই মামলায় সোহেলকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টা পর্যন্ত সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। বিকেলে সোহেল জবানবন্দি দিলে ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।