‘ঘাতক’ শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের ৩টি মুঠোফোন পুকুরে ফেলেন কাজী কামাল

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদকে আজ সোমবার ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়ছবি: আসাদুজ্জামান

কলকাতায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডের দুই দিনের মাথায় দেশে ফেরেন শিমুল ভূঁইয়া। এরপর তাঁর সঙ্গে দফায় দফায় মুঠোফোনে কথা বলেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ। তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় শিমুলের সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছ থেকে নিহত আনোয়ারুলের ছবিও নেন। পরে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে দেখে শিমুলের সঙ্গে যোগাযোগের তিনটি মুঠোফোন পুকুরে ফেলে দেন তিনি। 

ওই সব মুঠোফোন উদ্ধারে কাজী কামাল আহমেদকে আবারও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেতে আদালতে আবেদন করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেই আবেদনে আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডে কামাল আহমেদের সম্পৃক্ততা নিয়ে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউল্লাহ আজ সোমবার এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে রিমান্ড আবেদন নাকচ করেছেন।

আদালত কামাল আহমেদকে ঝিনাইদহ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ঝিনাইদহের একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে আলামত (তিনটি মুঠোফোন) উদ্ধার অভিযান চালানোরও আদেশ দিয়েছেন।

কামাল আহমেদের রিমান্ড চেয়ে করা আবেদনে ডিবি আদালতকে জানিয়েছে, আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডে প্রধান ভূমিকা রাখা শিমুল ভূঁইয়ার মুঠোফোন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৫ মে শিমুল ভূঁইয়া কলকাতা থেকে বাংলাদেশে আসেন। ১৬ মে আনোয়ারুল আজীম হত্যার বিষয়ে মুঠোফোনে শিমুল ভূঁইয়া কাজী কামালের সঙ্গে কথা বলেন। পরে শিমুল ভূঁইয়া ও কাজী কামাল ফরিদপুরের ভাঙ্গায় একসঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। হোয়াটসঅ্যাপে আনোয়ারুল আজীমের ছবি বিনিময় করেন। ১৭ মে থেকে ১৯ মের মধ্যে এই দুজন হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন। খুদে বার্তা আদান-প্রদান করেন।

এসব তথ্যের ভিত্তিতে কাজী কামালকে গ্রেপ্তার করা হয় উল্লেখ করে ডিবি আবেদনে আরও বলেছে, পরে জিজ্ঞাসাবাদে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তা বলার কথা স্বীকার করেন কাজী কামাল। কামালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই তিনটি মুঠোফোন কোথায়? জবাবে তিনি বলেছিলেন, মুঠোফোন তিনটি হারিয়ে গেছে। এ বিষয়ে তিনি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। পরে কাজী কামাল ১৪ জুন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, দুটি মুঠোফোন তিনি ঝিনাইদহের গাঙ্গুলী হোটেলের পেছনের পুকুরে ফেলেছেন। আরেকটি মুঠোফোন ফেলেছেন স্টেডিয়ামের পেছনের পুকুরে।

আরও পড়ুন

এই তিনটি মুঠোফোন উদ্ধারে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে আদালতকে জানায় ডিবি। রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান। রিমান্ডের পক্ষে আরও যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু। অপর দিকে আসামিপক্ষ থেকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন নাকচের আবেদন করা হয়।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ১২ মে কলকাতায় যান। পরদিন কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে তাঁকে খুন করা হয়। ওই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশকে এ তথ্য জানায়।

এরপর ঢাকা থেকে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের কাছ থেকে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা ও তাঁর লাশ গুম করার ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পায় পুলিশ। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পর তাঁর লাশ টুকরা টুকরা করে ব্যাগে ভরে সরানো হয়।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে ৭ জুন ঝিনাইদহ থেকে কাজী কামাল আহমেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৯ জুন তাঁর আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পাঁচ দিনের মাথায় তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।