শামসুন্নাহার হল নির্যাতন দিবস উপলক্ষে ঢাবিতে ছাত্রসংগঠনগুলোর মোমবাতি প্রজ্বালন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল নির্যাতন দিবস উপলক্ষে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। বুধবার সন্ধ্যায়ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল নির্যাতন দিবস উপলক্ষে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। বুধবার সন্ধ্যায় পৃথকভাবে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এই কর্মসূচি পালন করে।

২০০২ সালের ২৩ জুলাই রাতে শামসুন্নাহার হলে পুলিশের সহযোগিতায় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন কর্তৃক ছাত্রীদের ওপর চালানো নিপীড়নের প্রতিবাদে তখন ব্যাপক আন্দোলনের সূচনা হয়। ওই আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপাচার্য পদত্যাগে বাধ্য হন। দিবসটি স্মরণে প্রতিবছর প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি

সন্ধ্যায় ‘স্মৃতিতে প্রতিরোধ’ শিরোনামে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করেছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। শামসুন্নাহার হল নির্যাতন দিবস উপলক্ষে হলের মূল ফটকে তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে শুরু হওয়া এ আয়োজন শেষে আবাসিক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালিত হয়।

এই কর্মসূচির সঞ্চালনায় ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ইশরাত জাহান এবং সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন।

প্রদর্শনীর শুরুতে ইশরাত জাহান বলেন, ‘আজ ২৩ জুলাই, শামসুন নাহার হল নির্যাতন দিবস। ২০০২ সালের এই দিনে রাতের আঁধারে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের ক্যাডার ও পুলিশের যৌথ হামলায় হলের সাধারণ ছাত্রীরা নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। দুই শতাধিক ছাত্রী আহত হন এবং ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই বর্বর হামলার পেছনে প্রত্যক্ষ মদদদাতা ছিলেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে নামলে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয় এবং উপাচার্য এই গণপ্রতিরোধকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে আখ্যা দেন— যেমনটা আমরা মাকসুদ কামালের ক্ষেত্রেও বিগত জুলাইয়ে প্রত্যক্ষ করেছি। তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত ওই উপাচার্যকে পদত্যাগে বাধ্য হতে হয়।’

রাজু ভাস্কর্যের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মোমবাতি প্রজ্বালন

দিবসটি উপলক্ষে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মোমবাতি প্রজ্বালন করে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। পরে সংগঠনটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব আল আমিন সরকার বলেন, ‘আমরা জুলাই ঘটিয়েছি একটি পরিবর্তনের আশায়। পূর্ববর্তী সময়ে আমরা দেখেছি ক্ষমতাসীন সরকারের ছাত্রসংগঠনগুলো হলগুলোকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখত। ২৪–এ আমরা এ ধরনের রাজনীতিকে লাল কার্ড দেখিয়েছি।’

মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘আজকের এই দিনে শামসুন্নাহার হলে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন ছাত্রদলের তৎকালীন হায়েনারা পান্ডারা গুন্ডারা আমাদের বোনের ওপর নির্মম হামলা করেছিল, হলের ভেতর ঢুকে আক্রমণ করেছিল পুলিশ আমরা পূর্ববর্তী ইতিহাস থেকে জানি এ দেশে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি কখনো সুখকর অনুভূতি দিতে পারেনি।’

ছাত্র ফেডারেশনের মোমবাতি প্রজ্বালন

সন্ধ্যা সাতটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের সামনে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচির আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

মোমবাতি প্রজ্বালন শেষে ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, ‘২০০২ সালের সেই ভয়াবহ ঘটনার পর আমাদের সিনিয়র ভাইবোনেরা যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তখনকার আন্দোলনের চাপে তৎকালীন উপাচার্য পদত্যাগে বাধ্য হন। ভবিষ্যতেও আমাদের যেকোনো নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচেতন ও দৃঢ় থাকতে হবে। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।’

এ ছাড়া গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটও মোমবাতি প্রজ্বালন করেছে।