পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যুর ঘটনায় দুই মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (বাঁয়ে) ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের লোগোছবি : সংগঠন দুটির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

যশোরের অভয়নগর থানা পুলিশের হেফাজতে আফরোজা বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। আজ সোমবার পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠন দুটি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে আসকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আফরোজা বেগম অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের জলিল মোল্লার স্ত্রী। গত শনিবার (১ জুন) রাত দেড়টার দিকে উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রাম থেকে তাঁকে আটক করে অভয়নগর থানায় নেওয়া হয়। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার (২ জুন) সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে আফরোজা থানাহাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে আবার থানায় ফিরিয়ে আনা হয়। পরে ওই দিন সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবারের অভিযোগ, মাদক রাখার কথা বলে নির্যাতন করায় অসুস্থ হয়ে আফরোজার মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।

এমএসএফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আফরোজার ছেলে সাব্বির মোল্লা জানিয়েছেন, ১ জুন রাত ১২টার দিকে অভয়নগর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সিলন আলীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল আফরোজার বাড়িতে আসে। নারী পুলিশ ডেকে এনে তাঁর শরীর তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে ঘরের ভেতর নিয়ে দরজা আটকিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে পুলিশ। পরে তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় থানায় নেওয়া হয়।

আসক বলছে, পরিবারের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে শারীরিক নির্যাতন বেআইনি। এ ছাড়া একজন নারীকে মধ্যরাতে পুলিশের আটক করতে যাওয়ার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। আটকের পরে পরিবারের কাছে অর্থ দাবি করার অভিযোগটি পুলিশের বিরুদ্ধে যেন নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর এমএসএফ মনে করে, জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে তাঁকে ঘরে অমানবিক নির্যাতন করে থানায় নিয়ে ৩০টি ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার দেখানো, ঘরে থাকা ইজিবাইক বিক্রির ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা লুট করা ও ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা পুলিশের অনৈতিকতার বহিঃপ্রকাশ। এ ঘটনায় পুলিশ যে বক্তব্য দিয়েছে তা নিছক বলার জন্য বলা, যা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেও মনে করে এমএসএফ।