কর্মক্ষেত্রে ২০২৩ সালে দুর্ঘটনায় ৭০৯ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন পরিবহন খাতে। এর আগের বছর এ ধরনের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৩০ জনের। সে হিসাবে ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যু কমেছে।
গতকাল রোববার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) প্রকাশিত এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে ‘বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্রভিত্তিক বিলস জরিপ-২০২৩’ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
বিলস জানিয়েছে, জরিপে ১৩টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্রের বাইরে দুর্ঘটনা, নির্যাতন, শ্রম অসন্তোষ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া শ্রমিকদের ৭০৬ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী। সবচেয়ে বেশি ২৪৬ (৩৪ শতাংশ) শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে পরিবহন খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৩ (১৫ শতাংশ) শ্রমিকের মৃত্যু হয় নির্মাণ খাতে। এরপর কৃষি খাতে ৯৭ জনের (১৩ শতাংশ) মৃত্যু হয়।
জরিপে আরও বলা হয়েছে, শীর্ষ তিন খাত ছাড়াও ৪৪ জন রিকশাশ্রমিক, ৩৫ জন প্রবাসী শ্রমিক, ২৯ জন দিনমজুর, ২৬ জন মৎস্য শ্রমিক, ১৫ জন বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্ট শ্রমিক, ১৫ জন নৌপরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট শ্রমিক, ১১ জন স্টিল মিল শ্রমিক ও ৭৮ জন অন্যান্য খাতের শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
অপর দিকে ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪৮২ শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে ৪২২ জন পুরুষ (৮৭ শতাংশ) ও ৬০ জন (১২ শতাংশ) নারী। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে সর্বোচ্চ ১১৪ (২৩ শতাংশ) শ্রমিক আহত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৎস্য খাতে ৮৫ জন (১৭ শতাংশ) আহত হন। এরপর রয়েছে নির্মাণ খাত। এ খাতে ৬১ (১২ শতাংশ) শ্রমিক আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনা, উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড়, নৌকা বা ট্রলারডুবি, পড়ন্ত বস্তুর আঘাত, বিষাক্ত গ্যাস, নৌ দুর্ঘটনা, দেয়াল বা ছাদ ধসে পড়া, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও বন্য পশুর আক্রমণ কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
বিলসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৩৪ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। সে বছর আহত হন ১ হাজার ৩৭ শ্রমিক। নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ২৭ জন ছিলেন পুরুষ আর ৭ জন নারী।
এর আগে গত শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) ফাউন্ডেশনের এক জরিপের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪৩২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আর আহত হয়েছেন ৫০২ জন।