কক্সবাজার সৈকতে তরুণীদের হেনস্তার ঘটনায় মামলা
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দুই তরুণীকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর, কান ধরে ওঠবসসহ হেনস্তা করার অভিযোগে দুজনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ছয়জনকে। আজ শনিবার বিকেলে ভুক্তভোগী এক নারী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় নামোল্লেখ করা দুই আসামি হলেন মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম ও নয়ন রুদ্র। এর মধ্যে ফারুককে গতকাল শুক্রবার রাতে শহরের ভোলা বাবুর পেট্রলপাম্প–সংলগ্ন এলাকা থেকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ফারুকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ফারুকুল চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার বাসিন্দা মাজেদুল ইসলামের ছেলে। তিনি মাদ্রাসার ছাত্র। কয়েক বছর ধরে তিনি শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাহারছড়া এলাকায় থাকেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে মামলার বাদী তাঁর একজন বান্ধবীর সঙ্গে সুগন্ধা সৈকতে ঘুরতে যান। তখন ফারুকুল ইসলাম ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে তাঁদের গতি রোধ করেন এবং গালিগালাজ করতে থাকেন। সমুদ্রসৈকতে অপকর্ম করার অভিযোগ তুলে ফারুকুল ইসলামসহ কয়েকজন একপর্যায়ে তাঁদের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। লাঠির আঘাতে বাদী ডান হাতের বাহুতে আঘাত পেয়েছেন। তাঁর হাতের হাড় ভেঙে গেছে। লাঠির আঘাতে তাঁর ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীও আঘাত পেয়েছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
শুক্রবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সৈকতে দুই তরুণীকে মারধর, কান ধরে ওঠবস ও হয়রানির তিনটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তা দেখে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণীকে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে। তাঁকে ঘিরে রেখেছেন কয়েকজন তরুণ-যুবক। বেশির ভাগ তরুণ মুঠোফোনে মারধরের ভিডিও ধারণ করছিলেন। তরুণীকে লাঠি দিয়ে মারধর করে সৈকত থেকে চলে যেতে বলা হচ্ছিল।
পুলিশ জানায়, সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। তাঁর ফেসবুক ওয়ালেও সেদিন হেনস্তার শিকার হওয়া তরুণীর ছবি ছিল। গত বৃহস্পতিবার তিনি নিজেই ওই ছবি পোস্ট করেছিলেন। ফারুকুলের বিভিন্ন পোস্ট বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানিয়েছে, তিনি ও তাঁর সঙ্গে থাকা অনেকেই ১১ সেপ্টেম্বর রাতে সৈকতে নারীদের হেনস্তা করেছেন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, হেনস্তার শিকার তরুণীরা তৃতীয় লিঙ্গের। কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, সৈকতে মাঝেমধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) কয়েকজন আসেন। পর্যটকেরা বিরক্ত হন। মারধরের সময় সেখানে কোনো পুলিশ ছিল না। ঘটনার পর খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ যায়।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্যসচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের হলেও তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের। বিষয়টি কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।