সাহসের সঙ্গে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোনো পরিস্থিতি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশকে অগ্নিসংযোগের মতো সব বাধা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার নরসিংদীতে নবনির্মিত ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা (জিপিইউএফএফ) উদ্বোধন–পরবর্তী নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো অগ্নিসন্ত্রাস বা মানবসৃষ্ট সব দুর্যোগ অতিক্রম করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশবাসীকে শুধু সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
এর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম এবং বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন সার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক ঘোড়াশাল–পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে কৃষকেরা সারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। সার চাওয়ার কারণে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয় গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখনই কথা দিয়েছিলাম, কৃষকদের সারের জন্য ছুটতে হবে না। সার কৃষকের ঘরে পৌঁছে যাবে। এ জন্য ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর যত কষ্টই হোক, সারের কোনো ঘাটতি আমরা হতে দিইনি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত ব্যক্তিদের ওপর গুলি চালিয়ে ২০ জনকে হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখানে বেসরকারি খাতে একটি এবং সরকারিভাবেও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করে দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ২০১৩ সালে বিএনপি আজকের মতো অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়। কর্মরত প্রকৌশলী সেই আগুনে পুড়ে মারা যান। এভাবেই দেশের সম্পদ সে সময় একে একে তারা ধ্বংস করেছে। এখন আবারও তখনকার মতো অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, তাদের চেতনা কবে ফিরবে বা দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ আসবে?’
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আমরা যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করি, তেমনি অগ্নিসন্ত্রাস বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ নিশ্চয়ই অতিক্রম করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। দেশবাসীকে বলব, সাহসের সঙ্গে যেকোনো অবস্থা মোকাবিলা করতে।’
দেশি-বিদেশি চক্রান্তে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিলেন। আর তিনি (শেখ হাসিনা) তা না করে বলেছিলেন, ‘আমাদের কী পরিমাণ গ্যাসের রিজার্ভ আছে, তার অ্যাসেসমেন্ট করে দিতে, তারপর তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। কেননা দেশের সম্পদ আগে দেশের মানুষের কাজে লাগাতে হবে।’ সেদিন সেই চক্রান্তে সায় দিলে আজ এই সার কারখানা করতে পারতেন না বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় যেতে হবে, বঙ্গবন্ধুর মেয়ে সেই দৈন্যতায় ভোগে না। ক্ষমতা তার জন্য বড় কিছু নয়, দেশের মানুষের কল্যাণই বড়।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা।
অনুষ্ঠানে জাপান ও চীনের রাষ্ট্রদূতেরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের মাধ্যমে জাপান ও চীনের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘“সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়”, আমাদের এই পররাষ্ট্রনীতির আরেকটি ফসল হচ্ছে আমাদের এই সার কারখানা। আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। এটি অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর। যেখানে পরিবেশের কোনো দূষণ হবে না।’
জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার টন সার উৎপাদিত হবে, যা দেশের মোট ইউরিয়া চাহিদার ৩৫ শতাংশ।
এর মাধ্যমে ইউরিয়া সার আমদানিতে বছরে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের। দেশে খাদ্য উৎপাদনে ইউরিয়া সারের চাহিদা বেশি থাকায় খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে এ সার কারখানা। পলাশ ও ঘোড়াশালের পুরোনো দুটি কারখানায় যে পরিমাণ গ্যাস লাগত, একই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে নতুন কারখানায় আগের দুটি কারখানার চেয়ে বেশি ইউরিয়া উৎপাদন করা যাবে।
এ সার কারখানা প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ১০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ, যা পরিশোধ করতে ১০ বছর সময় লাগবে। এতে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন সার উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পরে মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহাসমাবেশে যোগ দেন।