জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস বর্জন করলেন নবীন শিক্ষার্থীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

হলে আসন বরাদ্দ এবং সশরীর ক্লাস শুরুর নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের (৫২তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস বর্জন করেছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে একে একে ১৬টি বিভাগ ও ১টি ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেন।

প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং কয়েকটি বিভাগের সভাপতিদের সঙ্গে কথা বলে ক্লাস বর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ৫২তম ব্যাচের কয়েকজন নবীন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেসবুকে তাঁদের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘জেইউ ব্যাচ ৫২ অফিশিয়াল গ্রুপ’ নামে একটি গোপন (প্রাইভেট) গ্রুপ রয়েছে। গ্রুপে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের শ্রেণি প্রতিনিধির (সিআর) পোস্টের মাধ্যমে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

ক্লাস বর্জনের তালিকায় রয়েছে ইতিহাস, গণিত, রসায়ন, নৃবিজ্ঞান, দর্শন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইংরেজি, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মেসি, প্রাণিবিদ্যা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, আইন ও বিচার, চারুকলা, পরিবেশবিজ্ঞান, বাংলা বিভাগ। আর বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটও রয়েছে এ তালিকায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (৫২তম ব্যাচ) ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয় গত বছরের ২৪ জুন। এরপর পাঁচ মাস পর গত ৩০ নভেম্বর এসব শিক্ষার্থীর অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়। সে হিসাবে ভর্তি পরীক্ষার সাত মাস পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি নবীন এসব শিক্ষার্থী।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী হুমায়রা হক বলেন, ‘আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা অনলাইন ক্লাস বর্জন করেছি। দীর্ঘ পাঁচ মাস আমাদের ঘরে বসিয়ে রাখার পর আমাদের অনলাইন ক্লাস শুরু করা হয় এবং বলা হয়, জানুয়ারিতে নির্বাচনের পর আমাদের হল অ্যালোটমেন্টসহ সশরীর ক্লাস শুরু করা হবে। তাই নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষাই করি। প্রশাসন প্রথম থেকেই আমাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও আশা দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো নোটিশ দিচ্ছে না। কোনো দিন আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্লাস করতে পারব কি না, সেই শঙ্কা নিয়ে আমরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারব না। আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে আমাদের অধিকার আদায় করতে চাই; আশা নয়, অফিশিয়াল নোটিশ চাই।’

নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিলা তাসনিম সেতু জানান, বাড়িতে রেগুলার অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। ইন্টারনেট কানেকশনে কিংবা ডিভাইসে সমস্যা, ক্লাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়াসহ একেকটা সমস্যা লেগেই থাকে। আরেক দিকে থাকে উপস্থিতির চিন্তা। তিনি বলেন, ‘আমার বিভাগের অনেক সহপাঠীকেই দেখেছি, গ্রামে বাসায় নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় তীব্র শীতে বাইরে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। আমাদের শিক্ষকেরা আন্তরিকভাবে আমাদের ক্লাস করালেও নানা কারণে আর অনলাইন ক্লাসের ধৈর্য নেই। এমনকি অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতিও কমতে কমতে অর্ধেকে নেমে এসেছে।’

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন প্রসঙ্গে পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জামালউদ্দিন রুনু জানান, তাঁর বিভাগের ৫২তম ব্যাচের সিআর ফোনে ক্লাস বর্জনের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে অফিশয়াল কোনো নোটিশ পাননি। তিনি বলেন, ‘তবে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা যদি এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে আমি একমত। কারণ, বিজ্ঞানের বিষয়গুলো আসলে অনলাইনে সম্ভব হয় না। এখানে ল্যাবের অনেক কাজ থাকে। অনলাইনে আমরা ল্যাবের কাজ বা টিউটোরিয়াল পরীক্ষাগুলোও নিতে পারছি না।’

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ জানান, নৃবিজ্ঞান এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করার কথা তিনি শুনেছেন। তবে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সভাপতি জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাস করেছেন। নৃবিজ্ঞান বিভাগের অনেক শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট এবং ডিভাইস সমস্যার কারণে ক্লাস করতে পারছেন না বলে বিভাগ থেকে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ এবং উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।