ওসমান হাদি হত্যা এবং গণমাধ্যম-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার স্বাধীন তদন্ত দাবি

বিবৃতিপ্রতীকী ছবি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যা এবং প্রথম আলো-ডেইলি স্টারসহ গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় পৃথক ও স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছেন ৮টি সংস্থা ও নেটওয়ার্ক এবং ৪৬ বিশিষ্ট নাগরিক।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে অনলাইন ও অফলাইনে সহিংসতা উসকে দেওয়া ব্যক্তি ও নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা এবং ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষা জোরদারেরও দাবি জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার; তদন্তের অগ্রগতি জনসমক্ষে নিয়মিত প্রকাশ; রাষ্ট্রীয় গাফিলতি থাকলে দায় নির্ধারণ ও জবাবদিহির দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, ছায়ানট, উদীচীসহ সব হামলার পৃথক ও স্বাধীন তদন্ত; উসকানিদাতা বা সংগঠক বা অর্থদাতা চিহ্নিত করে বিচার; ভবিষ্যৎ হামলা ঠেকাতে স্পষ্ট নিরাপত্তা প্রটোকল ও দ্রুত পদক্ষেপের ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বাধীন ও দ্রুত তদন্ত; অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার; সংখ্যালঘু সুরক্ষায় বিশেষ নিরাপত্তা ও কমিউনিটিভিত্তিক আস্থা গঠনের উদ্যোগ এবং তাঁর পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

আগাম সতর্কতা, ঝুঁকি মূল্যায়ন, দ্রুত মোতায়েন ও কমান্ড সমন্বয়—এই চারটি বিষয়ে অবিলম্বে দৃশ্যমান উন্নতি; ব্যর্থতার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জবাবদিহি নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিরোধ ও সুরক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে। একই সঙ্গে অনলাইন ও অফলাইনে সহিংসতা উসকে দেওয়া ব্যক্তি ও নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা এবং ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষা জোরদার করার মাধ্যমে ‘উসকানি বা ঘৃণাভাষণ বা মব মোবিলাইজেশন’ প্রতিরোধের দাবি জানানো হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতে অবিলম্বে প্রকাশ্যে সহিংসতাকে প্রত্যাখ্যান করে শান্তি, সংযম, সংখ্যালঘু সুরক্ষা, মুক্ত গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক পরিসরের নিরাপত্তা এবং নির্বাচন স্থিতিশীলতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করতে দেশের সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ৮টি সংস্থা ও নেটওয়ার্ক এবং ৪৬ বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দলীয় পরিচয় নির্বিশেষে সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তি বা সমর্থকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভয়, ঘৃণা ও প্রতিশোধের রাজনীতি বন্ধ করাই আজ জাতীয় দায়িত্ব।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই—রাষ্ট্র, রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, গণমাধ্যমসহ সকলে সম্মিলিতভাবে যদি এখনই কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেয়, তবে জন-আস্থা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক এ অগ্রযাত্রা আরও গভীর সংকটে পড়বে, যার দায় এড়ানো যাবে না।’

যৌথ বিবৃতি দেওয়া সংস্থা ও নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে সিএসও অ্যালায়েন্স, নারীপক্ষ, একশনএইড বাংলাদেশ (এএবি), বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (ব্রেইন), দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে), ডাসকো ফাউন্ডেশন, ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও), মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক)।

যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, সিএসও অ্যালায়েন্সের সহ আহ্বায়ক সারা হোসেন ও আসিফ সালেহ, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহীন আনাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম ও অধ্যাপক কামাল চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ-আল মামুন ও অধ্যাপক সৌভিক রেজা, অধ্যাপক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা খানম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের (বিএনএসকে) নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, অভিনেত্রী ও উন্নয়নকর্মী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, যোগাযোগবিশেষজ্ঞ টনি মাইকেল গোমেজ, সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানী দিনা এম সিদ্দিকী, প্রকাশক ও অ্যাকটিভিস্ট মাহরুখ মহিউদ্দিন, উন্নয়নকর্মী মো. খাইরুল ইসলাম, সিএসও অ্যালায়েন্সের ফোকাল পয়েন্ট কে এ এম মোর্শেদ, সিএসও অ্যালায়েন্স সচিবালয়ের সমন্বয়ক সাঈদ আহমেদ, উন্নয়নকর্মী সালমা মাহবুব, মুরশেদ আলম সরকার ও মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, মানবাধিকারকর্মী কাশফিয়া ফিরোজ, লেখক ও স্থপতি কবিতা চাকমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া রহমান ও কাজলী সেহরীন ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাসনিম সিরাজ মাহবুব, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ইসমাইল সাদী ও জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হাসান তালুকদার, মানবাধিকারকর্মী সানাইয়া ফাহীম আনসারী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাতেমা শুভ্রা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাইয়ান রাজী, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষক অলিউর সান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সৌমিত জয়দ্বীপ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির জৈষ্ঠ‍্য প্রভাষক হানিয়‍্যুম মারিয়া খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী শুসমিন আফসানা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সিরাজাম মুনিরা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হাসান তৌফিক ইমাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানভীর সোবহান, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক এ এস এম কামরুল ইসলাম।