বিশিষ্টজনদের বিবৃতি: অবৈধ আটক, গুম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে

গুম-খুন

গুম, নির্যাতন ও অবৈধ আটক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত হিসেবে যেসব কর্মকর্তা ও এজেন্সির নাম গণমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি করেছেন দেশের ২৭ বিশিষ্টজন। তাঁরা বলেছেন, বিশ্বাসযোগ্যতার স্বার্থে এই তদন্তে গুমের ভুক্তভোগী পরিবার, মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।  

রবি থেকে বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত। সফরের শেষ দিনে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাশেলেত বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানান। একই সঙ্গে তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো সুরাহার স্বার্থে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন।

সম্প্রতি গুম হওয়া ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে ‘আয়নাঘর’ নামে গোপন স্থানে আটকে রাখাসংক্রান্ত একটি তথ্যচিত্র একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে।

বিশিষ্টজনদের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও এজেন্সির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফোরামে গুম, নির্যাতন, অবৈধ আটকসহ চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। সম্প্রতি সুইডেনভিত্তিক একটি অনলাইন পোর্টাল ও আরও কিছু গণমাধ্যমে গুম ও অবৈধ আটকের শিকার ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার যে বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে, তা আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। ভুক্তভোগীদের বিবরণে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও গুমের ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিছু রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী, তাদের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং অবৈধ আটক ও গুম করে রাখার কয়েকটি স্থানের সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এটি দেশের নাগরিক, বিশেষ করে ভিন্নমতের মানুষের জন্য আতঙ্কজনক বার্তা দিয়েছে।’

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী নির্যাতন, গুম ও অবৈধ আটক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো ব্যক্তিকে বৈধভাবে আটক করার ক্ষেত্রেও তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালতে প্রেরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সংবিধানে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইন এবং যেসব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে বাংলাদেশ সদস্য হয়েছে, সেখানেও ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, মর্যাদাবিরোধী যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।’

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্তের জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সফরের জন্য যেসব অনুরোধ জানানো হয়েছে, সেগুলোর অনুমোদন দেওয়া এবং বাংলাদেশে তাদের তদন্ত পরিচালনায় পূর্ণাঙ্গ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

বিশিষ্টজনেরা বলেন, ‘আমরা মনে করি, অব্যাহত ও পরিকল্পিত গুম, নির্যাতন, অবৈধ আটক শুধু গুরুতর মানবাধিকার ও আইনের শাসনের লঙ্ঘন নয়, এগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধেরও সমতুল্য।’

বাংলাদেশ সরকারকে স্মরণ করিয়ে বিবৃতিদাতারা বলেন, বাংলাদেশ মানবতাবিরোধী অপরাধ-সংক্রান্ত রোম স্ট্যাটিউটের সদস্যরাষ্ট্র। এ ধরনের অপরাধ বাংলাদেশ রাষ্ট্রে ঘটতে থাকলে তা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারযোগ্য বিষয় হতে পারে এবং তা রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করতে পারে।

বিবৃতিদাতারা হলেন হামিদা হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আলী ইমাম মজুমদার, বদিউল আলম মজুমদার, ফিরদৌস আজিম, শাহ্দীন মালিক, আলী রীয়াজ, পারভীন হাসান, আনু মুহাম্মদ, আসিফ নজরুল, স্বপন আদনান, শহিদুল আলম, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গীতি আরা নাসরীন, সামিনা লুৎফা, শাহনাজ হুদা, সালমা আলী, তবারক হোসেইন, শিরীন হক, হানা শামস আহমেদ, সঞ্জীব দ্রং, অরূপ রাহী, নূর খান, রেহনুমা আহমেদ, নাসের বখতিয়ার, সুব্রত চৌধুরী ও নোভা আহমেদ।