২২ দিন ধরে বন্ধ ডায়ালাইসিস সেবা, কষ্টে রোগীরা

বন্ধ রয়েছে ফেনী সদর হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিট
ছবি: প্রথম আলো

ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালে ২২ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা। এতে ডায়ালাইসিস করতে আসা রোগীরা বিপাকে পড়ছেন। বেসরকারি হাসপাতালে বাড়তি টাকা দিয়ে তাঁদের ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সাম্প্রতিক বন্যায় হাসপাতালে পানি ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ হয়ে যায়। শিগগিরই এ সেবা পুনরায় চালুর চেষ্টা চলছে।

আজ বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের হেমোডায়ালাইসিস ইউনিটের ফটক বন্ধ করে রাখা রয়েছে। দুজন রোগীর স্বজনকে দেখা যায় হাসপাতালে এসে কবে ডায়ালাইসিস সেবা চালু হবে, সে বিষয়ে খবর নিচ্ছেন। তবে হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

খবর নিতে আসা এক রোগীর স্বজন আবদুর রহমান বলেন, সরকারি খরচের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের খরচ পাঁচ-ছয় গুণ বেশি। হাসপাতালের সেবা বন্ধ রাখায় বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে বেশি টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে।

আবদুর রহমান বলেন, প্রত্যেক রোগী ৬ মাসের জন্য ২২ হাজার টাকা করে হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের জন্য জমা দিয়েছেন। অথচ এখন তাঁদের সেবা দেওয়া হচ্ছে না।

ছাগলনাইয়া থেকে আসা এয়াকুব মিয়া নামের অন্যজন বলেন, ‘আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। প্রাইভেট হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে অনেক টাকা খরচ হয়। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ওনার ডায়ালাইসিস চলছিল। বন্যায় হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢোকার কারণে ডায়ালাইসিস বিভাগের সব যন্ত্রাংশ ওপর তলায় তুলে ফেলা হয়। এরপর তিন সপ্তাহ পার হলেও এখনো ডায়ালাইসিস সেবা চালু হয়নি।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ আগস্ট সন্ধ্যার মধ্যে ফেনীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নিচতলা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ডায়ালাইসিস স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালের মেঝে থেকে বন্যার পানি নামতে সময় লাগে প্রায় ১০ দিন। হাসপাতালে অন্যান্য সেবা এর মধ্যেই স্বাভাবিক হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে ডায়ালাইসিস সেবা।

ফেনী জেলা ছাড়াও খাগড়াছড়ি; চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড; নোয়াখালীর বসুরহাট, সেনবাগ; কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ চার জেলার মানুষের ডায়ালাইসিসের অন্যতম ভরসা ফেনী জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে ২১০ জন কিডনি রোগী হাসপাতালটির ডায়ালাইসিস সেবার আওতায় রয়েছেন। আরও প্রায় পাঁচ শতাধিক কিডনি রোগী এ সেবা পেতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। কোনো রোগী মারা গেলে বা অন্য কোথাও চলে গেলে নতুন কাউকে সেবার আওতায় নিয়ে আসা হয়।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসিফ ইকবাল বলেন, হেমোডায়ালাইসিস ইউনিটের বৈদ্যুতিক মোটর, গ্যাসের লাইন, অক্সিজেন ও কিছু যন্ত্রপাতি পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব যন্ত্র মেরামতের কাজ চলছে। মেরামত হলেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেবা পুনরায় চালু করা হবে।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগের প্রধান জয়দেব সাহা বলেন, কিডনি জটিলতার রোগীদের সপ্তাহে গড়ে দুবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। এটি করা না গেলে অনেক বড় বিপদ বা মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।

জানতে চাইলে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, ‘দ্রুত সেবাটি চালুর জন্য কাজ চলছে। আগামী শনি অথবা রোববারের মধ্যে এ সেবা চালু করা যাবে বলে আমরা আশাবাদী।’

ফেনী সদর হাসপাতালে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমে ছয় শয্যা নিয়ে ডায়ালাইসিস ইউনিট চালু হয়। বর্তমানে সেটি ১০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ইউনিটটিতে প্রতিদিন ৩ পালায় ৩০ জন রোগীর ডায়ালাইসিস করা হয়।